লাইলাতুল কদর কী?
লাইলাতুল কদর অর্থ মর্যাদার রাত। আরবি শব্দ “লাইলাহ” মানে রাত এবং “কদর” মানে সম্মান, মর্যাদা, ভাগ্য। এটি হলো সেই রাত্রি, যখন পবিত্র কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ হয়েছে এবং যার ফজিলত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও আমলসমূহ সম্পর্কে ইসলামিক শিক্ষায় বলা হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম একটি রাত। এই রাতে পবিত্র কুরআন নাজিল হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতারা অবতরণ করেন মানুষের তকদির নির্ধারণে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি গুনাহ মাফের রাত, রিজিকের বরকতের রাত এবং জান্নাত লাভের এক বিশেষ সুযোগ।
এই রাতকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করার জন্য বিভিন্ন আমল রয়েছে—নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, ইস্তেগফার, দরূদ শরিফ পাঠ এবং বেশি বেশি দান-সদকা। রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, এ রাতে দোয়া করা উচিত: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুয়্যুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আ’ন্নী।” এই দোয়ায় আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
এ কারণে, মুসলমানদের উচিত রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো বিশেষভাবে ইবাদতে কাটানো এবং এই ফজিলতপূর্ণ রাতের সর্বোচ্চ সাওয়াব অর্জনের চেষ্টা করা।
কুরআনের আলোকে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের একটি সম্পূর্ণ সুরা (সূরা কদর) উৎসর্গ করেছেন এই রাতের মর্যাদা তুলে ধরতে।
“নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। তুমি কি জান কদরের রজনী কী? কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।”
– [সূরা কদর: ১-৩]
এছাড়াও সূরা দুখানে উল্লেখ আছে:
“আমি একে (কুরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি… এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।”
– [সূরা দুখান: ৩-৪]
📅 লাইলাতুল কদরের সম্ভাব্য তারিখ
নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে খোঁজ করতে:
- ২১ রমজান
- ২৩ রমজান
- ২৫ রমজান
- ২৭ রমজান
- ২৯ রমজান
বিশিষ্ট আলেমদের মতে, সবচেয়ে সম্ভাব্য রাত হলো ২৬ রমজান দিবাগত রাত, অর্থাৎ ২৭ রমজান।
🙏 এই রাতে পড়ার জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়া
হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বর্ণনায়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া পড়তে বলেছেন:
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুয়্যুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আ’ন্নী।”
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
🕌 লাইলাতুল কদরের আমলসমূহ
এই বরকতময় রাতে নিচের আমলগুলো করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ:
- ✅ নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাওবা, সালাতুত তাসবিহ)
- ✅ কুরআন তেলাওয়াত (বিশেষ করে সূরা কদর, সূরা দুখান, সূরা ইয়াসিন)
- ✅ দরূদ শরীফ বেশি পরিমাণে পাঠ
- ✅ ইস্তেগফার ও তাওবা করা
- ✅ দান-সদকা করা
- ✅ জিকির-আজকার করা
- ✅ কবর জিয়ারত ও মৃতদের জন্য দোয়া
- ✅ সালাতুল হাজাত ও সালাতুশ শোকর
🕋 কেন এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন:
“এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।”
– (তাফসিরে ইবনে আব্বাস)
এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ায় এটি এত মর্যাদাসম্পন্ন। মুমিনরা যারা এই রাত ইবাদতে কাটায়, তারা পায় অতুলনীয় সাওয়াব, যা কোনো সাধারণ রাত দিতে পারে না।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও আমলসমূহ জানা মানে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগকে কাজে লাগানো। এই রাত শুধু ইবাদতের নয়, আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহাসন্ধিক্ষণ। তাই এই পুণ্যময় রাত যেন কোনোভাবে হাতছাড়া না হয়।
লাইলাতুল কদর রাতের ফজিলত: হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রহমতের রাত
FAQ: প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি
Q: লাইলাতুল কদর কখন?
✅ সাধারণভাবে, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে হয়।
Q: কীভাবে জানবো আজ লাইলাতুল কদর?
✅ নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না, তবে ২৭তম রাত সবচেয়ে সম্ভাব্য রাত। এ রাতে আকাশ প্রশান্ত, বাতাস মৃদু হয়।
Q: কোন সূরা বেশি পড়া উচিত?
✅ সূরা কদর, সূরা দুখান, সূরা ইয়াসিন এবং ৪ কুল নিয়মিত পড়া উচিত।
Q: কী দোয়া বেশি পড়া দরকার?
✅ “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুয়্যুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আ’ন্নী” দোয়াটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
📣 আপনারা কীভাবে এই বরকতময় রাতটি পালন করেন? নিচে মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না! এই লেখা ভালো লাগলে শেয়ার করুন প্রিয়জনদের সঙ্গে।