রোজা ও গরমে সুস্থ থাকবেন যেভাবে

রোজা ও গরমে সুস্থ থাকবেন যেভাবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

বসন্তের গরম পড়েছে বেশ। গ্রীষ্মকালও সমাগত। এই সময়ে তাই স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। তীব্র গরমে রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাই থাকতে হবে বাড়তি সতর্ক। গ্রীষ্মে অধিকাংশ মানুষ ঘাম জমে অসুস্থ হয়ে যায়। ছোট- বড় প্রায় সবারই এই ধরণের সমস্যা হয়। শীতকাল থেকে গ্রীষ্মে প্রবেশ করার সময় অগণিত মানুষ সর্দি, কাশি, জ্বর, টনসিলের ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়। কিছু সচেতনতাবোধ এই সমস্যাগুলো থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখবে। জেনে নিন গরম ও রোজায় সুস্থ থাকতে কী করবেন-

১. সেহেরি ও ইফতারে নিয়মিত সবুজ, হলুদ মৌসুমী ফল ও শাক সবজি খেতে হবে। টক ফলের মধ্যে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, নাকি দিয়ে পানি পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। ইফতারে প্রতিদিন কয়েক রকম ফল রাখুন। ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণের জন্য লেবুর শরবত খেতে পারেন। গ্রীষ্মকালে রোজা তাই সেহেরি ও ইফতারে পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। সালাদ রান্না করে খাওয়ার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার পাওয়া যাবে বেশি।

২. যেহেতু গরমের সময় তাই ঘাম জমে অনেকের ঠান্ডা লাগতে পারে। গলা ব্যথা থাকলে বা টনসিলের জায়গা ফুলে গেছে মনে হলে, হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করবেন। এটি আপনি ইফতারের পর করতে পারেন। এতে অনেকটাই আরামবোধ করবেন।

৩. ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে, যেকোনও ইনফেকশন বেশি হয়ে যায়। সামান্য সর্দি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব হলেই ওষুধ খাবেন না। শরীর খারাপ বেশি লাগলে, তখন ওষুধ খাবেন। যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা চিকৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবারের তালিকা ঠিক করবেন।

৪. মৌসুমি ফল অবশ্যই থাকতে হবে আপনার ইফতারির মেনুতে। কারণ, ফল থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট পেয়ে থাকি। বরাবরের মতো ভাজাপোড়া খাবারের পরিবর্তে সবজি দিয়ে খুব সুন্দর আইটেম তৈরি করে খেতে পারি ইফতারে। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, তালিকায় একটি ডিমের উপস্থিতি থাকলে আপনি ইফতারে অনেক বেশি পুষ্টি পাবেন। ভাজাপোড়া খাবারের পরিবর্তে চাইলে ভাত, মাছ বা সবজি খেতে পারেন। অথবা রুটি- সবজি, মাছ বা মাংস খেতে পারেন। রোজার মাস ছাড়া বাকি দিনগুলোতে সকালের নাস্তায় যে রকম খাবার থাকে, সেটির সঙ্গে ফল ও শরবত যুক্ত করলেই ভালো মানের ইফতারি হয়ে যায়।

৫. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শরীরে ফ্যাট সেলের পরিমাণ বেড়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন খুব দ্রুত বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ইফতারে ভাজা- পোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। সেহেরিতেও খান ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার।

৬. যাদের সাইনোসাইটিস রয়েছে অর্থাৎ খুব দ্রুত ঠান্ডা লেগে যায়, তাদের সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করতে হবে। রান্নাঘরে ঘেমে নেয়ে রান্না করে সেই ঘামের শরীর নিয়েই গোসল করতে চলে যাবেন না। শরবতের সঙ্গে অতিরিক্ত বরফ মিশিয়ে খাবেন না। অতিরিক্ত রোদ থেকে এসেও সঙ্গে সঙ্গে গোসল করতে যাবেন না।

৭. জরুরি প্রয়োজনে বাসার বাইরে হলে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার নিতে হয়, তারা প্রয়োজনে ইনহেলার ব্যবহার করবেন। ঠান্ডার দিন চলে গেছে বলে ইনহেলার লাগবে না এই ধারণা ভুল। ইনহেলার ফুসফুসকে রোগ- জীবাণু মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। আমাদের চারপাশের বাতাসে ভেসে বেড়ায় অসংখ্য রোগ জীবাণু। এসব জীবাণু মুখ ও নাক দিয়ে আমাদের রক্তে প্রবেশ করে। তাই শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, সব সময় ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। করোনাভাইরাসেরটিকা দেওয়া থাকলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

৮. ঘাম জমে যাওয়া জামা কাপড় রৌদ্রে না শুকিয়ে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে কাপড় পড়তে হবে। জুতাও ঘামে ভিজে যায়। চামড়া ছাড়া অন্য জুতা ডেটল বা স্যাভলন পানিতে পরিষ্কার করতে পারলে ভালো হয়। মাঝে মাঝেই কড়া রোদে কিছুক্ষণ শুকিয়ে নিতে হবে। তাহলে রোগ জীবাণু ধ্বংস হবে।

৯. সপ্তাহে অন্তত একদিন গোসলের বালতিতে কয়েক ফোটা ডেটল বা স্যাভলন অথবা রোগ জীবাণু মুক্তকারক পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। এতে নানারকম রোগ- জীবাণু থেকে দূরে থাকা যাবে।

১০. কালো জিরা, মেথি, তিতা জাতীয় খাবার খেলে রক্তের জীবাণুগুলো ধ্বংস হবে। ইফতার ও সেহেরিতে তিতা জাতীয় খাবার খান। ৬ মাস পর পর বাসার সবাইকে একসাথে কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে। তবে যারা গর্ভবতী, কিডনি বা লিভার এর জটিলতায় ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কৃমিনাশক ওষুধ খাবেন না।

১১. সম্ভব হলে রৌদ্রে ছাতা ব্যবহার করবেন। রৌদ্রে অতিরিক্ত ঘাম হলে বাসায় ফিরে কিছু সময় বিশ্রাম নেবেন। প্রয়োজন মনে করলে ইফতারে ওরস্যালাইন খাবেন। ওরস্যালাইন না থাকলে শরবত খাবেন। যেখানে লবণ অবশ্যই থাকতে হবে। লবণে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড। যা আমাদের দেহের পানিশূণ্যতা দূর করে। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তারা ওরস্যালাইন বাদ দিবেন। যদি হঠাৎ করে রক্তচাপ অনেক কমে যায়, তখন রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য ওরস্যালাইন খাবেন।

১২. চাকরি বা জরুরি কাজে নিয়মিত বাসার বাইরে যেতে হলে সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। এতে চোখে ধূলোবালি পৌঁছাবে না।

সারাবাংলা/এজেডএস

Explore More Districts