৫ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে রাজকোটে ইংল্যান্ডকে ৪৩৪ রানে হারিয়েছে ভারত। যা তাদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানে জয়ের রেকর্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২১ সালে ৩৭২ রানের জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড। ভারত প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান করে ইংলিশদের স্বাগতিকরা থামিয়ে দেয় ৩১৯ রানে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে জয়সওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ৪৩০ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীদের তারা ছুঁড়ে দেয় ৫৫৭ রানের লক্ষ্য। রান পাহাড়ে চাপা পড়ে ১২২ রানে গুটিয়ে যায় বেন স্টোকসের দল।
রবিবার(১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজকোটের সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ৩২২ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে ভারত। ৪র্থ দিনের প্রথম সেশনে অবশ্য ইংল্যান্ডকে হতাশ করেন এমনকি ‘ব্যাটার’ কুলদীপ যাদবও। শুভমান গিলের সঙ্গে তার জুটিতে ৫০ রান উঠে যায়। প্রথম ঘণ্টার শেষদিকে গিয়ে প্রথম উইকেট হারায় ভারত, কুলদীপের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পরেন গিল। আউট হওয়ার আগে গিলের ব্যাট থেকে আসে ৯১ রান। গিলের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন আগের দিনে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া ব্যাটার ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। ক্রিজে থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কুলদীপ। ২৭ রান করে থামেন এই নাইটওয়াচম্যান ব্যাটার। এরপর রাজকোটে চলে জয়সওয়াল ও সারফারাজ খানের শো।
বিরতি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেও জয়সওয়ালের মনোযোগে একটুও চিড় ধরেনি। সহজাত ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান, দেড়শ স্পর্শ করেন ১৯২ বলে। ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি ২৩১ বলে। কিছুক্ষণ পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন রোহিত। দেড়শ থেকে দ্বিশতক ছোঁয়ার পথে জেমস অ্যান্ডারসনকে টানা তিনটি ছক্কা মারেন জয়সওয়াল। ১৮৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসারের।
ভিনোদ কাম্বলি ও ভিরাট কোহলির পর তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন জয়সওয়াল। সবচেয়ে কম বয়সে একাধিক দ্বিশতক করাদের তালিকায় কাম্বলি ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরেই তিনি। জয়সওয়ালের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৭২ রানের জুটিতে ৭২ বলে ৬৮ রান করেন সারফারাজ। অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে টেস্ট দলে জায়গা করে নেয়া এই ব্যাটার অভিষেক ম্যাচে দুই ইনিংসেই করলেন ফিফটি।
৫৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডাকেটের রানআউটে পথ হারাতে শুরু করে ইংল্যান্ড। মিড অন থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন, তবে উইকেটের পেছন থেকে তৎপর ধ্রুব জুরেলের সঙ্গে পেরে ওঠেননি ক্রলি ডাকে সাড়া না পেয়ে ক্রিজে ফিরতে চাওয়া ডাকেট। বুমরাহ’র বলে জ্যাক ক্রলির পর রবীন্দ্র জাদেজার বলে জো রুট হন এলবিডব্লু, দু’বারই আম্পায়ার্স কল বিপক্ষে গেছে ইংলিশদের। এ দু’জনের মধ্যে ফেরেন ওলি পোপ ও জনি বেয়ারস্টো। পোপ স্লিপে ক্যাচ দেন জাদেজার বলে, বেয়ারস্টো এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউ করারও প্রয়োজন বোধ করেননি। রুট ফেরেন পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে, দলীয় ৫০ রানে। ওই ৫০ রানে বেন স্টোকস ও রেহান আহমেদকেও হারায় ইংল্যান্ড।
বেন ফোকস ও টম হার্টলি কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন টেস্টকে পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়ার। তবে জাদেজার চতুর্থ শিকার হয়ে থামতে হয় ফোকসকে, দিনে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত খেলার সুযোগও তাতে তৈরি করে ভারত। টম হার্টলি এরপর বোল্ড হন আজই দলের সঙ্গে যোগ দেয়া অশ্বিনের বলে, মায়ের অসুস্থতায় যিনি টেস্ট ছেড়ে গিয়েছিলেন। মাঝে একবার জাদেজার বলে এলবিডব্লু হয়েছিলেন উড, তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন জাদেজারই পঞ্চম শিকার হয়ে, ধরা পড়েন জয়সওয়ালের হাতে। শেষ পর্যন্ত দিনটি তো ভারতেরই!
/আরআইএম