দেশে উৎপাদিত গবাদি পশুর সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় কোরবানি কেন্দ্রীক। দু বছর করোনার আঘাতে অনেকেই কোরবানি দেন নি। এ বছর করোনার প্রকোপ কিছুটা কম হওয়ায় এ বছর কোরবানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে কোরবানির পশুর দাম। কিন্তু সরকার ইচ্ছে করলেই ভোক্তা পর্যায়ে পশুর দাম ৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ‘সাদিক এগ্রো’ এর কর্নধার মো. ইমরান হোসেন।
মো. ইমরান হোসেন বার্তা২৪. কমকে জানান, কোরবানির ঈদ ঘিরে কিছু খামারী পশু বিক্রি শুরু করেছেন। অনেক পাইকাররা গ্রামগঞ্জের হাট থেকে পশু কিনছেন ঢাকা সহ বিভিন্ন বড় শহরে বিক্রির জন্য। কিন্তু সে সব হাটের ইজারা ও হাসিল বৃদ্ধি করায় প্রভাব পড়ছে পশুর দামে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিজেলের দাম বেড়েছে ফলে কোরবানির পশু পরিবহন কষ্টও বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয় যে বড় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বেশ কয়েক মাস ধরে গো খাদ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, গবাদিপশুর উৎপাদনে ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ খরচই হয় খাদ্যে। এ ছাড়া শ্রমিক, ওষুধ, আনুষঙ্গিক মিলিয়ে বাকি ২৪ শতাংশ খরচ হয়। এর পরে লাভ।

তিনি বলেন, সরকার সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তাসাধারণের কথা চিন্তা করে এবছর বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের অস্থায়ী হাট গুলোর ইজারা ও হাসিল মওকুফ করে দিলে গবাদি পশুর দামের সরাসরি ৫ শতাংশ কমবে। যা সারাসরি ভোক্তার পাবেন।
সাদিক এগ্রোর কর্নধার আরো বলেন, যারা কোরবানির পশু নিয়ে বিভিন্ন অস্থায়ী হাটে যাবেন তাদের অথাৎ পশুবাহী গাড়ি সরকারি ফেরি ও ব্রীজে টোল ফ্রি করে দিতে পারে। প্রয়োজনে সরকার গাড়ি প্রতি ডিজেল ও দিতে পারে। তাহলেও কোরবানির পশুর দাম ক্রতাদের আয়ত্বে থাকবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, ২০১৬ সালে ৯৮ লাখ ১৩ হাজার পশু কোরবানি হয়। তার পর থেকে ক্রমাগত বেড়ে ২০১৭ সালে ১ কোটি ৪ লাখ, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ও ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু কোরবানি হয়। ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ওই বছর ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু কোরবানি হয়।
২০২১ সালে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। চলতি বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ।
খামারিরা জানিয়েছেন, প্রান্তিক চাষিরা গরুকে খাবার হিসেবে দেন তৈরি ক্যাটেল ফিড, গমসহ কয়েক রকম ভুসি, সরিষার খৈল, খড় ও কাঁচা ঘাস। এর মধ্যে প্রতিটি প্রাণিখাদ্যের দামই বেড়েছে ৪০ থেকে ৮৭ শতাংশ। বড় খামারিরা খাদ্য উপাদান কিনে নিজেরা তৈরি করে পশুকে খাওয়ান। গত এক বছরে এসব খাদ্য উপাদানের দামও বেড়েছে ৪০ শতাংশের ওপরে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচও বাড়তি গুনতে হবে খামারিদের।

ছোট পশুর চাহিদা থাকবে বেশি:
২০১৭ সাল থেকে ছাগল ও ভেড়ার চেয়ে গরু-মহিষ কোরবানি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে গত বছর এতে ছেদ পড়ে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছর ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হয়েছে ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি; গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি। যেখানে করোনার আগে ২০১৯ সালে ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৪৩৪টি গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছিল এবং ছাগল ও ভেড়া হয়েছিল ৪৯ লাখ ১ হাজার ১৮৮টি।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবারও ছোট গরু কিংবা ছাগল ও ভেড়ার দিকে ঝুঁকতে পারেন ক্রেতারা। এ ছাড়া দেশে মোট কোরবানির সংখ্যাও কমতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা বলেন, গত দুই বছর কোরবানির সময় লকডাউন ছিল। এবার সে পরিস্থিতি নেই, ফলে গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বাড়তি চাহিদা থাকতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর কাগজে-কলমে সারাদেশে বসেছিল ২ হাজার ৪০০টি হাট। এবছরও এ রকমেরই হবে। প্রতিটি হাটেই ভেটেরিনারি চিকিৎসক দল কাজ করবে। এবার ২৫ হাজার কসাইকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ে শঙ্কা:
কোরবানির হাটে সিন্ডিকেট, সড়ক ও বাজারে চাঁদাবাজি এবং যানজট নিয়ে উদ্বিগ্ন খামারিরা। তাঁরা বলছেন, এবার কোরবানি হবে ভরা বর্ষায়। ফলে যানজটে পড়তে পারে পশুবাহী ট্রাক। এ ছাড়া প্রতিবছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে সিন্ডিকেট। এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেই চক্র কাজ করছে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে বন্যার সুযোগ নিয়ে এবং অন্য এলাকায় গোখাদ্যের আগুনদামকে পুঁজি করে আগেই পশু কিনে নিচ্ছে ওই চক্র। তারা এ পশু কিনে ঢাকায় মজুত করছে বলে জানান ব্যাপারিরা।
সুনামগঞ্জ ও সিলেটের একাধিক খামারি জানান, কৃষকের হাতে এখন কোনো গরু নেই। বন্যার কারনে গ্রামের গরু শহর থেকে আসা ব্যাপারিরা কিনে নিয়েছেন।