আধুনিক জীবনে মোবাইল এখন নিছক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে চিকিৎসকদের মতে, রাত জেগে দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার শরীর ও মনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কেবল চোখের নিচে কালি নয়, বরং একাধিক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে এই অভ্যাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত রাত জাগা শরীরের স্বাভাবিক ঘড়িকে (বায়োলজিক্যাল ক্লক) ভেঙে দেয়। এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) ব্যাহত হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গুরুতর প্রভাব পড়ে।
রাতে মোবাইল ব্যবহারের ৫ বড় ক্ষতি
১) ওজন বৃদ্ধি: রাত জাগার ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনে পরিবর্তন ঘটে। এতে বারবার খাওয়ার ইচ্ছে হয় এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে।
২) হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: দীর্ঘমেয়াদে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন অতিরিক্ত ক্ষরণ হতে থাকে, যা শরীরকে সব সময় উত্তেজিত অবস্থায় রাখে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানা অসুখ ডেকে আনে।
৩) ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: ঘুম কম হলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪) উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ: নিয়মিত রাত জাগলে রক্তচাপের ওঠানামা শুরু হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
৫) মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি: ঘুমের অভাবে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। এর ফলে উদ্বেগ, মুড সুইং, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া এবং ব্রেন ফগের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৬–৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম প্রয়োজন। ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকা উচিত। বিশেষ করে শোবার ঘরে মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাস বাদ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাত জেগে মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাস কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, বরং জাতীয়ভাবে কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই পরিবার ও সমাজ পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
এনএন