ঢাকা, ০২ অক্টোবর – অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ৫ আগস্টের পর দেশে চাঁদাবাজি বেড়েছে এবং রাজনৈতিক সরকার ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, আর রাজনৈতিক সরকার ও রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ সম্ভবও নয়।
তিনি আরও বলেন, আগে যেখানে এক টাকা চাঁদা নেওয়া হতো, এখন দেড়-দুই টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৫ অগস্টের পর নানা পক্ষ চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে এবং আগে যারা ছিল, তারাও চাঁদাবাজির পেছনে আছে। যারা চাঁদাবাজি করে তারাই আবার ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য।
আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ শতাংশে নেমে আসবে আশা প্রকাশ করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছে। তবে এটি থামানো আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। অন্তর্বর্তী সরকারও কাউকে ধরে শাস্তি দেওয়ার নীতিতে নেই।
সরকার চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করেও তা ভাঙতে পারেনি মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা চাঁদাবাজদের নেক্সাস ভাঙতে পারতাম, যদি আরও শক্তিশালী হতাম। আমি ও প্রফেসর ইউনূস নিয়ম মেনে চলি, নিয়মের বাইরে গিয়ে কাউকে ধরা-ধরির মধ্যে যাই না।
বাংলাদেশে রাজনীতি ভালো হলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে, আমি আশা করি, রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে আশা প্রকাশ করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, চাঁদাবাজি বন্ধে রাজনৈতিক দরকার ও সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। যারা ক্ষমতা থেকে গেছে, তাদের লোকজনও দোকানপাটে ঘোরাফেরা করছে।
এমপি ব্যাংকের মালিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, টিভি ও সংবাদপত্রের মালিক উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চাঁদাবাজদের নেক্সাস ভাঙতে রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। না হলে তাদের থামানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসা জড়িয়ে গেছে।
এনবিআর ও ব্যাংক সংস্কার এবং পাচারের টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আইএমএফ আরও শক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে ব্যাংক থেকে সব টাকা নিয়ে যাওয়া হলেও এখন সেখানে শৃঙ্খলা আসছে। আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাও ব্যাংক খাতের অগ্রগতি প্রশংসা করছে। ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে এখন আর সমস্যা হচ্ছে না।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই দাবি করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। উচ্চকক্ষে পিআর হতে পারতো, তবে বিএনপি রাজি হচ্ছে না। ভারতের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু আছে। তবে নির্বাচন নিয়ে আর সংশয় নেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের পক্ষে প্রতিবেশি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। এই সেন্সে আমি মনে করি, নির্বাচন এখন আর অনিশ্চিত নয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রেও কোনো টাকা ছাপানো হবে না।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দেশীয় ব্যবসায়ীরা সাপোর্ট পাচ্ছেন না। ব্যাংকের লিকুইডিটি সংকটে ঋণ পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক কারণে অনেকের ব্যবসা নষ্ট হয়েছে। এ জন্য ২% ডাউনপেমেন্টে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
বিদেশি ঋণ নেওয়ার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত অর্থবছরে ঋণ নেওয়া বাড়লেও এবার সতর্ক অবস্থানে আছে সরকার। আইএমএফের ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ না নেওয়ার শর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার আমি নিজেই সতর্ক। বাজেট সাপোর্ট চাইবো না, বরং কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো।’
তিনি আরও বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক দেনা ও বকেয়া বিল পরিশোধ করেছি। তারপরও রিজার্ভ বেড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আছে।
রাজস্ব আহরণ প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, কর ফাঁকিবাজদের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি কমায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে। বাজেট সাপোর্ট নেওয়া হলে ঋণদাতাদের নানা শর্তে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
আফ্রিকার অনেক দেশ চীনা ঋণে জটিলতায় পড়েছে মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের অক্টোবর বোর্ড সভায় গিয়ে আমি কোনো বাড়তি ঋণ চাইবো না। চীনের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লোন দিতে আগ্রহী হলেও আমরা সতর্ক আছি।
সূত্র: আরটিভি নিউজ
এনএন/ ০২ অক্টোবর ২০২৫