রাউজানে বাইরে থেকে দরজা আটকে একটি বসতঘরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার দিবাগত রাতে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর শীলপাড়ায় সুলাল শীলের ঘরে অগ্নিসংযোগের এ ঘটনা ঘটে। গত পাঁচ দিনে উপজেলার তিন এলাকায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যেসব ঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে, সেসবের প্রত্যেকটি হিন্দু পরিবারের।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক নারী সদস্য জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে চারদিকে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দেয়। কেরোসিনের গন্ধ নাকে এলে ঘরে থাকা ৯ নারী–পুরুষ ও শিশুর সজাগ হয়। তারা ঘরের দুদিক থেকে আগুনের শিখা দেখেন। এ সময় দরজা খুলে বের হওয়ার চেষ্টা করলে দেখেন, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। সবাই চিৎকার করতে করতে দা–বঁটি দিয়ে ঘরের বেড়া কেটে বের হয়ে রক্ষা পান।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর গতকাল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রাহাতুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ভূমি অংছিং মারমা ও জেলার সহকারী পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের আর্থিক ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিডিনিউজ জানায়, রাউজান থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুটি বসতঘর পুড়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, বাইরে থেকে ঘরের দরজা আটকে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা সেখান থেকে বিভিন্নজনের নাম লেখা একটি ব্যানার জব্দ করেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আগুন দেওয়া ঘরটি প্রবাসী সুলাল শীল নামে এক ব্যক্তির। সেখানে তার বোন ও বোন জামাই অনিল শীল পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আগুন দেখে অনিল শীল ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে বাইরে থেকে দরজা লাগানো দেখতে পান। এ সময় তিনি ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরের বেড়া কেটে বের হয়ে আসেন। প্রতিবেশী ও ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভান। আগুনে দুটি ঘর পুড়ে গেছে।
গত শনিবার ভোর রাতে একই কায়দায় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঢেউয়াপাড়া এলাকায় বিমল তালুকদার ও রুবেল দাশ নামে দুই ব্যক্তির বসতঘরে আগুন দেওয়া হয়। আগুন লাগার বিষয়টি টের পেয়ে বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে বাইরে থেকে দরজা আটকানো থাকার বিষয়টি বুঝতে পারেন। দুটি বসতঘরই দরজার বাইরে থেকে কাপড় দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। আর উঠানে কেরোসিন লাগানো কাপড় পড়ে থাকতে দেখা যায় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
এর আগে শুক্রবার ভোর রাতে কেউটিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সাধন বড়ুয়া ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনা পাল ও কামিনী মোহন পালের বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওইদিনও উঠান থেকে কেরোসিন মিশ্রিত কাপড়, বিভিন্ন নেতা ও সরকারের ঊর্ধ্বতনদের নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাউজান থানার ওসি সাজেদুল বলেন, সোমবার রাতের মতো একই কায়দায় আগের ঘরগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।
রাউজানের ইউএনও এস এম রাহাতুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি। পাড়া–মহল্লায় কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন থেকে পাহারার ব্যবস্থা করবে। তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারব এগুলো কেন হচ্ছে।


