বিকেল সাড়ে পাঁচটা। দুই ভাই মেঝেতে শুয়ে টিভি দেখছি। ছোট ভাইটা তখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি, পাশের ঘরে মায়ের সঙ্গে সে আছে। গ্রীষ্মের গরমে শীতলপাটি বিছিয়ে মেঝেতে শুয়ে থাকার মধ্যে একটি আলাদা আরাম আছে। হঠাৎ কলবেলের আওয়াজ। বড় ভাই আমার হাতে রিমোটটা গছিয়ে দিয়ে পাটি গোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি রিমোট হাতে শত চেষ্টার পরও দেখলাম, তা কাজ করছে না। অগত্যা টিভির মেইন সুইচ বন্ধ করে দিয়ে চলে এলাম পড়ার টেবিলে। শুরু হলো বিকট চিৎকারে পড়াশোনা, সদর দরজার ওপারে যিনি বেল বাজাচ্ছেন, তিনি যেন বুঝতে পারেন, তাঁর ছেলেরা পড়ছে। বাধ্য হয়ে মাকেই দরজা খুলে দিয়ে আসতে হলো। কারণ, তিনি বুঝে গেছেন, আজ আমরা পড়ালেখার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছে গিয়েছি, সেখান থেকে দরজা খুলে দেওয়ার মতো তুচ্ছ কাজে আমরা নামছি না। অনেকটা এমনই ছিল আমাদের শৈশবের রোজকার চিত্র।
বাবাকে খুব ভয় পেতাম। বাবার হাতের মার খুব যে বেশি খেয়েছি, তা নয়। আবার একদম কম খেয়েছি, তা–ও নয়! মেজ ছেলে হওয়ায় বড় ভাইকে দেখে অনেক কিছু শিখতাম। যে কাজ করলে বড় ভাই মার খেত, তা থেকে নিজেকে বিরত রাখতাম। তবে একদিনের মার খাওয়ার ঘটনা আজও মনে আছে। ছোটবেলায় কবুতর পোষার শখ ছিল। বারান্দায় কাঠের ঘর বানিয়ে আমি আর আমার ভাই মিলে দুই জোড়া কবুতর পালতাম। একদিন দুই ভাইয়ের মনে জেগে উঠল তুমুল পাখিপ্রেম। মনে হলো, আহা, বন্দিজীবন পাখিদের জন্য না জানি কত কষ্টের! দুই ভাই মিলে কবুতরগুলোকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করলাম। চিন্তা করলাম, যদি বারান্দার একটি গ্রিল কেটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়, তবে দিনের বেলা মুক্ত আকাশে উড়ে-ঘুরে সন্ধ্যায় পাখি তার নীড়ে ফিরে ঘুমাবে।