যশোর সিআইডি পুলিশের উপর মাদক ব্যবসায়ীর হামলা: আসামি ছিনতাই, চার পুলিশ আহত

যশোর সিআইডি পুলিশের উপর মাদক ব্যবসায়ীর হামলা: আসামি ছিনতাই, চার পুলিশ আহত

যশোরে সিআইডি পুলিশের একটি মাদকবিরোধী অভিযানে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার রাজারহাট বাজারের কেয়া খাবার হোটেলের সামনে মাদক ব্যবসায়ী তুষার ও তার সহযোগীদের হামলায় সিআইডির চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে দুইজন সাব-ইন্সপেক্টর রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, ওইদিন এসআই হাবিব, এসআই তরিকুল ইসলাম, এএসআই মো. জাহিদ হোসেন এবং কনস্টেবল (১২২৬ )মো. শহিদুল ইসলাম নিয়ে গঠিত একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। তারা রামনগর ইউনিয়নের রাজারহাট গ্রামের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডার ও রাজারহাট রামনগর এলাকার মাসুদ রানার ছেলে তুষার (২৭)কে আটক করে। আটক করার সঙ্গে সঙ্গেই তুষার উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করলে আশপাশ থেকে তার লোকজন ছুটে আসে।

স্থানীয়রা সিআইডি সদস্যদের ‘ভুয়া পুলিশ’বলে সন্দেহ করে ঘিরে ধরে এবং তাদের উপর বেপরোয়া হামলা চালায়। এসময় সিআইডির বেশ কয়েকজন সদস্য আত্মরক্ষার্থে সরে যেতে সক্ষম হলেও কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম জনগণের হাতে ধরা পড়ে এবং প্রচণ্ড মারধরের শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে আটক করে রাখা হয়। পরবর্তীতে যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই অনুপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কনস্টেবল শহিদুল ইসলামকে উদ্ধার করে যশোর সিআইডি অফিসে নিয়ে যায়।

পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে কনস্টেবল শহীদুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

যশোর সিআইডি পুলিশের অভিযান চলাকালে মাদক ব্যবসায়ী তুষারকে তার সহযোগীরা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এসময় সিআইডি পুলিশের হাতে আটক তুষারের পিতা মাসুদ রানাকে সিআইডি পুলিশের এক সদস্য ছেড়ে দেন। ঘটনাস্থল থেকে আটক অভিযুক্ত রাজারহাট এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে শাওন (২১) নামে অপর এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হলেও পরে রাতের আঁধারে সিআইডি অফিস থেকেই সিআইডির ইন্সপেক্টর কাজী কামাল হোসেন তাকে ছেড়ে দেন রহস্যজনক কারণে।

তবে ইন্সপেক্টর কাজী কামাল হোসেন বলেন, আমি কি আসামি ছাড়তে পারি। ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যারের সাথে কথা বলেন।অভিযুক্ত শাওন ও পুলিশের উপরে হামলা চালিয়েছে বলে পুলিশের একাধিক সুত্রে থেকে জানা গেছে।এঘটনায় সিআইডি পুলিশসহ রাজারহাট এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে যশোর সিআইডি পুলিশের পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) সিদ্দিকা বেগম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরিস্থিতি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেন। এ ঘটনার পর সিআইডি পুলিশের পক্ষ থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজারহাট ও আশপাশের এলাকায় তুষার ও তার চক্র মাদকের অবাধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন মহলে এঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, সিআইডির উপর হামলা এবং আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা কেবল একটি আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ নয়, বরং সংগঠিত অপরাধ চক্রের শক্তিশালী অবস্থানের প্রমাণ। তারা দাবি করেছেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

যশোর কোতোয়ালি মডেল ইন্সপেক্টর তদন্ত বলেন, থানায় পৃথক দুটি ধারায় মামলা হয়েছে যার মামলা নং১২ও ১৩তাং৪)৯/২৫।তিনি বলেন, সিআইডি পুলিশের ওপর হামলার বাদী এসআই তরিকুল ইসলাম, ও মাদক আইনে মামলার বাদী এসআই হাবিবুর রহমান।
এ বিষয়ে যশোর সিআইডি পুলিশের পুলিশ সুপার (এডিশনাল ডিআইজি) মোসাম্মৎ সিদ্দিকা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, এবিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে ।

Explore More Districts