নিজস্ব প্রতিবেদক॥ যশোরে করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি কোন ভাবে রোধ করা যাচ্ছে না। গোটা জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক যেতে পারে বলে সাতদিনের লকডাউনের আদলে কঠোর বিধিনিষেধের ইতিমধ্যে তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যেও গেল ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৭০ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। যা জেলার করোনা সনাক্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় জেলায় আক্রান্তের হার শতকরা ৪৯ দশমিক ৪২ ভাগ। এ সময়ে করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন করোনায় ও চারজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এনিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মো. রেহনেওয়াজ জানান, গেলে ২৪ ঘণ্টায় (অর্থাৎ শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) যশোরে ৯৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭০ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারের ল্যাবে ৯৪০ জনের মধ্যে ৪৬৯ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবে ১১ জনের করোনা পরীক্ষা করে একটি পজিটিভ ফল পাওয়া গেছে। এছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ার কারণে জেলায় করোনার জিনএক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আক্রান্তের হার শতকরা ৪৯ দশমিক ৪২ভাগ। তিনি আরও জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলা ও শহরে ৩০৯ জন, কেশবপুর উপজেলায় রয়েছে ২৪জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় রয়েছেন ২৪ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৪৮ জন, মণিরামপুর উপজেলায় রয়েছেন ১৯ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় রয়েছেন দুই জন, শার্শা উপজেলায় রয়েছে ৩২ জন এবং চৌগাছা উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ জন। এছাড়া গত বছর করোনা শুরু থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট ১১ হাজার ১৮৭জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসময় সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৮৮৮জন এবং মারা গেছেন ১২৯ জন।
এদিকে করোনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জন, বাড়িতে একজন ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই জন এবং এই সময় উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা গাজী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন কেশবপুর উপজেলার আব্দুল আজিজ মোড়ল (৬৫) ও মণিরামপুর উপজেলার ইছাক ছানা (৮৫)। এছাড়া বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের রুস্তম আলী (৯০)। এদিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহম্মেদ জানিয়েছেন, করোনা রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর শহরের বারান্দিপাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন (৪৬) এবং চৌগাছা উপজেলার মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে খলিলুর রহমান (৭০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এসময় উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৬৫), একই উপজেলার পানিসারা গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে আমিনুর ইসলাম (৬৬), ওই উপজেলার জামতলা গ্রামের মৃত বারেক মোল্ল্যার ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্ল্যা(৭০) এবং শার্শা ইছাপুর গ্রামের মৃত আক্কেল আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৬০)। অপরদিকে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলায় সাতদিনের লকডাউনের আদলে কঠোর বিধিনিষেধের ইতিমধ্যে তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। এদিন আরও কঠোর অবস্থানে নেমেছে প্রশাসন। দুপুর ১২টার পরে ওষুধের দোকান ছাড়া সকল প্রকার দোকানপাট বন্ধ করতে দেখা যায়। রাস্তায় প্রয়োজনীয় ব্যক্তি ও পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছুই চলাছল করতে দেখা যায়নি।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘যশোর জেলায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যশোর শহরসহ বেনাপোল, শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও অভয়নগর উপজেলার মানুষ বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমণের এখন পিক আওয়ার বা ঊর্ধ্বগতির সময় চলছে। তাই এখন কঠোরভাবে বিধিনিষেধসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে।’