মৌলভীবাজারে ৩ দফা দাবিতে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন

ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে হয়রানি বন্ধ করা, বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিআরটিএর মাধ্যমে রুট পারমিট ও লাইসেন্স প্রদানের ৩ দফা দাবিতে মৌলভীবাজারে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘মৌলভীবাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান সংগ্রাম পরিষদ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট’।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ৩ দফা দাবি তুলে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠক অ্যাডভোকেট আবুল হাসান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা এম খছরু চৌধুরী, সংগঠক রাজিব সূত্রধর, মো. রুস্তম আলী, জমসেদ ভূঞা, মো. শিরাজ মিয়া, মো. লুৎফুর রহমান, শেখ লিংকন আহমেদসহ শ্রমিক প্রতিনিধি ও রিকশা চালকবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আবুল হাসান বলেন, সারাদেশে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক চালনা এবং আনুষঙ্গিক নানা কাজের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং বিভিন্ন জায়গায় এটা সাধারণ মানুষের একমাত্র বাহন। এই রিকশা ভ্যান ও ইজিবাইক যাত্রী পরিবহন, পণ্য পরিবহন এমনকি পরিবেশ উপযোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ চালিত বলে এইসব বাহন শব্দ দূষণ কিংবা পরিবেশ দূষণ করে না। ছোট ছোট গলিপথে চলাচল করতে পারে এবং ভাড়া কম বলে বাহনগুলো দ্রুত সারা দেশে প্রয়োজনীয় ও জনপ্রিয় বাহনে পরিণত হয়েছে। রিকশা বাংলাদেশের একই সাথে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং সবচেয়ে অবহেলার বাহন। রিকশা চালানো কত অমানবিক পরিশ্রমের কাজ। প্রচণ্ড দাবদাহ, প্রবল বৃষ্টি কিংবা তীব্র শীতেও নিজের জীবিকা ও যাত্রীর সুবিধার কথা ভেবে দিনে-রাতে রিকশাচালকরা রাস্তায় রিকশা চালিয়ে থাকে। এইসকল বাহনে চালকদের শারীরিক পরিশ্রম লাঘব করা, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য আর খরচ কমানোর কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি রিকশায় ব্যাটারি স্থাপন করা শুরু হয়। প্রথমদিকে নির্মাণজনিত কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও ইতিমধ্যে তার অনেকাংশই দূর করে স্থানীয়ভাবেই আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এই বাহন যেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তেমনি সহজ, সস্তা এবং শহরের অলিগলিতে চলতে পারে বলে স্বল্প আয়ের মানুষের দৈনন্দিন কাজে এক অপরিহার্য বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নেতৃবৃন্দরা বলেন, গত ২১ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে আমরা দেখলাম মৌলভীবাজার শহরের প্রধান সড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। এসব যানবাহন শুধুমাত্র ফিডার বা শহরের ভেতরের সড়কে চলাচল করতে পারবে এবং যানজটমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে বলে ঘোষণাতে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাঁরা বলেন, মৌলভীবাজার শহর একটি ছোট শহর। শহরে যানজটের কারণ প্রধানত প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা, অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থা, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য। মৌলভীবাজার শহরে যানজটের প্রধান জায়গার মধ্যে হচ্ছে সেন্ট্রাল রোড, চৌমুহনা, শমসেরনগর রোড ও বেরীরপাড়। এসকল যানজটের জন্য একমাত্র হিসেবে ব্যাটারি রিকশা বা ইজিবাইক দায়ি নয়। শহরের সেন্ট্রাল রোডে বিভিন্ন শপিং মল ও দোকানের সামনে অবৈধভাবে প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং এই রোডে যানজটের অন্যতম কারণ যা সকলেরই জানা আছে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়ি প্রবেশের অন্যতম রাস্তা চৌমুহনায় হওয়ায়, শমশেরনগর রোডে গাড়ির স্ট্যান্ড থাকায় ও অবৈধভাবে মোটরসাইকেল সহ অন্যান্য যানবাহন পার্কিং এবং বেরীরপাড় এলাকায় পার্কিং ব্যবস্থা ব্যথিত অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠা ইত্যাদি কারণেও সেসকল এলাকায় যানজট লেগে থাকে। ফলে এককভাবে ব্যাটারি রিকশাকে দায়ী করা অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শহরে রিকশার সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য থ্রি হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করে এর আলোকে বিআরটি-এর অধীনে সারাদেশে ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান করা হলে এমন সমস্যা তৈরি হতো না এবং চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সড়কেও কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় না। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে থ্রি হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করে এর আলোকে বিআরটি-এর অধীনে সারাদেশে ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিটের দাবি করে আসছি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মহাসড়ক ব্যাতীত সকল সড়কে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চলাচলের বৈধতা দেয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধের এই ঘোষণার নিন্দা এবং ঘোষণাটি প্রত্যাহারের দাবিও জানাচ্ছি। এই পেশার সাথে সরাসরি যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে যার মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ রিকশা, রিকশা-ভ্যান এবং ব্যাটারি চালিত যান্ত্রিক যানবাহন রিকশা ও ইজিবাইক চালানোর সাথে যুক্ত। বাকি ১০ লাখ মেকানিক, গ্যারেজ মালিক, মহাজন, চার্জিং ব্যবসায়িসহ সংশ্লিষ্ট মানুষ। গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত এই তিন চাকার যান্ত্রিক যানবাহন এখন মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষ নিজেরাই নিজেদের কাজের ব্যবস্থা করে নিয়েছে আর তাদের আয়ের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল আছে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ কোটি মানুষ। ৬০ লাখ মানুষ দিনে গড়ে ১০০০ টাকা আয় করলে প্রতিদিন দেশের অর্থনীতিতে যোগ হয় ৬০০ কোটি, মাসে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বছরে জিডিপিতে তাদের অবদান ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। যা আমাদের জাতীয় আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর স্বৈরাচার বিরোধী ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে কমপক্ষে ২৪ জন রিকশা শ্রমিক শহীদ হয়েছেন।

সংকট নিরসনে প্রশাসন ও সরকারের প্রতি তাদের ৩ দফা দাবিগুলো হলো:
১. বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫-এ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও অন্তর্ভুক্ত করা। বিআরটি কর্তৃক অভিন্ন সমন্বিত নীতিমালার আলোকে সারাদেশে থ্রি হুইলার ৯ সমজাতীয় যানবাহনের নিবন্ধন রুট পারমিট, চলাচলের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
২. মৌলভীবাজার শহরের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বৈধ ঘোষিত ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইক চলাচলে হয়রানি ও বন্ধ করা চলবে না।
৩. শহরের যানযট নিরসনের নামে কোনপ্রকার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।

Explore More Districts