‘মোগো ছাইরা দেন, দেহি কিছু ধইরা বাঁচতে পারি কিনা’

‘মোগো ছাইরা দেন, দেহি কিছু ধইরা বাঁচতে পারি কিনা’

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি:

‘মোগো ছাইরা দেন, দেহি কিছু ধইরা বাঁচতে পারি কিনা’

 ‘ও ভাই মোগো ছাইরা দেন, আর পারি না। ভাসতে ভাসতে যদি কখনো কিছু হাতে পাই দেহি হেইয়া ধইরা বাঁচতে পারি কিনা’ কথাগুলো বললেন সাগরে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর ভাসতে ভাসতে বেঁচে যাওয়া জেলেরা।

ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর এক সঙ্গে বয়া ধরে ১২ জেলে ৩ দিন সাগরে ভেসে থাকার পর ৩ দিনের মাথায় ৩ জেলে ভেসে থাকাবস্থায় এমন বর্ণনা দেন‌ ফিরে আসা জেলেরা। 

ট্রলার ডুবির চারদিন সাগরে ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে ৯ জেলে বেঁচে ফিরলেও বাকি ৩ জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ১২ ঘণ্টা পর তিন জেলেও পাওয়া যায়। চারদিন তারা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই লবণ পানি খেয়ে সাগরে ভেসে ছিলেন। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি, ঢেউ আর মৃত্যুভয়কে সঙ্গী করে বেঁচে ফেরার সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। 

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা কবির শিয়ালী, সোহাগ ও গোপাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দেন। তারা বলেন, ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর যখন বয়া নিয়ে ১২ জন ভেসে ছিলাম ৩ দিন ভাসার পর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সঙ্গে থাকা জেলেদের বলি ভাই মোগো এখন ছাইরা দেন। বয়া আর ধইরা রাখতে পারি‌ না। ভাসতে থাকি, ঢেউয়ে ঢেউয়ে যদি কোনো ট্রলার বা কিছু পাইলে ধরমু, না‌ হয় মরমু। তাদের ছাইরা ১২ ঘণ্টা ভেসে থাকার পর একটি ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করে। 

জানা যায়, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের পশ্চিম মঠের খাল এলাকার আলমগীর খলিফার মালিকানাধীন ‘এফবি সাইকূল’ নামের ট্রলারটি ১২ মাঝিমাল্লাসহ ৫ জুলাই গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। পরদিন ৬ জুলাই সকাল ৬টার দিকে উত্তাল সাগরে প্রবল ঢেউয়ের কবলে পড়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরের শেষ বয়ার কাছে ট্রলারটি ডুবে যায়। 

উদ্ধার হওয়া ট্রলারের মাঝি কবির হোসেন বলেন, ‘ট্রলারে থাকা রিং বয়া ও ফ্লুট আঁকড়ে ধরে একত্রে ভেসে থাকেন ১২ জন। প্রথমে সবাই একত্রে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢেউ ও স্রোতের তোড়ে তিনজন জেলে আলাদা হয়ে যান। বাকি ৯ জন প্রাণপণ লড়ে বেঁচে ছিলেন। চার দিন সাগরে ভেসে ভেসে তারা চলে আসেন রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের দিকে। ভোলা থেকে আসা একটি মাছ ধরা ট্রলারের মাঝি কাশেম মাঝিসহ জেলেদের সহযোগিতায় আমাদের ভাসতে থাকা ৯ জেলেকে উদ্ধার করে দুপুরে রাঙ্গাবালী নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন- কবির হোসেন (৫২), এবাদত (৩৬), আল আমিন সিকদার (২৮), জাহিদ (২৭), রাসেল (২৪), ইব্রাহিম খান (৪০), মুনসুর (২৮), শাহ আলম (৬২) ও নূরুল হক (৪৫)। তাদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। ১২ ঘন্টা পরে অপর খবির শিয়ালী (৪০), সোহাগ‌ মিয়া (৩৮) ও গোপাল চন্দ্র মিস্ত্রী (৪০) বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পাওয়া যায়। 

এফবি সাইকুল ট্রলারের মালিক আলমগীর খলিফা বলেন, উদ্ধার জেলেরা এখনো শারীরিকখাবে সুস্থ নয়। জেলেরা কুলে আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা বাড়ি আসার জন্য রওনা হয়েছে। 

রাঙ্গাবালী নৌপুলিশ ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, উদ্ধার হওয়া জেলেদের চরমোন্তাজ স্লুইস বাজারে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ট্রলার মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

তিনি আরও কলেন, উদ্ধার হওয়া জেলেরা ফ্লুট নিয়ে ভেসে ছিল। সাগরে থাকা অন্য জেলেরা তাদের দেখে উদ্ধার করেন। পরে সংবাদ পেয়ে আমরা গিয়ে সোনারচরসংলগ্ন আন্ডারচর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে চরমোন্তাজে নিয়ে আসি। 

 প্রায় সময় দুর্যোগ  জলোচ্ছ্বাসে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে কিন্তু ট্রলার ডুবির ঘটনার পর জেলেদের উদ্ধারের জন্য সরকারিভাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দুর্যোগের সময় সাগরে দুর্ঘটনা ঘটলে জেলেদের উদ্ধারের জন্য দ্রুত আকাশ যান‌ অর্থাৎ হেলিকপ্টার দেওয়ার জন্য । যাতে করে দ্রুত জেলেসহ অন্যান্যদের উদ্ধার করা যায়।

The post ‘মোগো ছাইরা দেন, দেহি কিছু ধইরা বাঁচতে পারি কিনা’ appeared first on Amader Barisal – First online Newspaper of Greater Barisal – Stay with Barisal 24×7.

Explore More Districts