মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানও

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানও

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানও

এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেপ্তারকৃত সাজ্জাদ হোসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিঙরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। শুধু ইউপি চেয়ারম্যানই নয় সিআইডির অভিযানে মেডিকেল কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্ট ও চিকিৎসকসহ মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এসব তথ্য জানান সিআইডি গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আজাদ রহমান।

তিনি বলেন, এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরী থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যদের সন্ধান পায় সিআইডি। এসব কাজে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানান সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঢাকা জেলায় অভিযান চালিয়ে মেডিকেল কলেজে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূলহোতা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিঙরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ছাড়াও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত বাকিরা হলো- নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিংয়ের পরিচালক আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, ডা. মো. সোহানুর রহমান সোহান, ডা. তৌফিকুল হাসান রকি, ডা. ফয়সাল আলম বাদশা ও ডা. ইবরার আলম।

সিআইডির এ কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সাজ্জাদ হোসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিঙরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং গত ২০১০ সাল থেকে তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রটির মাস্টার মাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। সাজ্জাদ ২০১৭ সালে মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের অপর একটি মামলারও আসামী। সাজ্জাদ উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন।

এর আগে গ্রেপ্তারকৃত একাধিক আসামী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সাজ্জাদের নাম বলেছে ও জসীমের গোপন ডায়রিতেও তার নাম এবং ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃত আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস নামের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এছাড়াও তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত আসামী ডা. জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে সিআইডি।

এসপি আজাদ রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ডা. সোহানুর রহমান সোহান বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজ হাপ্পুর কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। গ্রেপ্তারকৃত ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে গত ২০১০ সালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধা তালিকায়য় ১১তম স্থান লাভ করেন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

এরপর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইলেন্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ডা. ফয়সাল পরবর্তীতে প্রশ্নফাঁস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি আগে প্রেপ্তারকৃত আসামী ডা: জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাশ করেছেন। সেই সুবাদে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রকি বিটস কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু ও রনি মিলে অনৈতিক উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. রনি জিজ্ঞাসাবাদে ডা. রকির কথা বলেছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা গ্রেপ্তারকৃত আসামী ডা. ইবরার আলম ও ডা. জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন। ইবরার ২০১৩-১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ডা. রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।

গ্রেপ্তার রায়হানুল ইসলাম সোহান ও বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁসকৃত প্রশ্ন পায় ও বকুলকে তা সরবরাহ করে। বকুল তার ৪ ভর্তিচ্ছু ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে। ৪ জনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত ডা. সাইফুল আলম বাদশা গত ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ ও ১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের সবাই মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারেও কাজ করছে সিআইডি।

ওশিন

Explore More Districts