মুক্তারপুরে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে যাত্রী ড্রাইভার নাজেহাল, গ্রেফতার ৩ | munshiganjnews.com

মুক্তারপুরে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে যাত্রী ড্রাইভার নাজেহাল, গ্রেফতার ৩ | munshiganjnews.com

মোহাম্মদ সেলিম
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নে মুক্তারপুর সেতু এলাকায় ডিবি পুলিশের পরিচয়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ একটি পিকআপ ভ্যান তল্লাশির নামে আটক করে। এই সময় সন্ত্রাসীরা পিকআপ ভ্যানের যাত্রী, ড্রাইভার ও সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মিরকাদিম পৌরসভার মিরাপাড়া গ্রামের কুতুব উদ্দিনের পুত্র আফতাব উদ্দিন শাওন (৩১)। রামপাল ইউনিয়নের পানহাটা গ্রামের আ: খালেক রাঢ়ীর পুত্র ইব্রাহীম আহম্মেদ তপু (২৯) ও পঞ্চসার ইউনিয়নের আধারিয়াতলা গ্রামের নাজির হোসেনের পুত্র মো: হৃদয় (২৮)। তবে তাদেরকে গ্রেফতারের সময় আরো অনেকেই সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়।

এরমধ্যে একজন সাংবাদিক পরিচয়ের ব্যক্তিও রয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এখানো পালিয়ে যাওয়া চিহ্নিত ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রেফতারকৃত আফতাব উদ্দিন শাওনের নেতৃত্বে এই এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ নানা রকমের অপকর্ম চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

এই গ্রুপটি সেতু এলাকার মুক্তারপুর বাজার থেকে মালিপাথর এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে বিরক্ত ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে যুগল প্রেমিক ও প্রেমিকা সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছে তাদের হাতে। রাত বাড়লে তাদের তৎপরতা আরো বেড়ে যায়।

জানা যায়, ধলাগাও বাজার থেকে যাত্রাবাড়ী প্রতিদিনই সবজির গাড়ী যাতায়াত করে থাকে। সেই গাড়ীতে যাত্রাবাড়ী থেকে সিনে বাংলা টিভির সাংবাদিক মুনা আক্তার ও তার ছেলে ধলাগাওয়ে ফিরছিলেন। এই গাড়ীতে যাত্রাবাড়ীতে সবজি বিক্রেতারাও ছিলেন। এই ঘটনাটি ঘটে গেল বুধবার দিন রাতে।

এদিকে ঘটনার রাতে মুক্তারপুর সেতুর ঢালে পিকাপ ভ্যানটি নামার পর আফতাব উদ্দিন শাওনের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ মুন্সীগঞ্জের ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে গাড়িটির গতিরোধ করে। এই সময় তারা ড্রাইভারসহ সকলকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দেয়। তারপরে তাদের নেতৃত্বে তারা গাড়ির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন। এ সময় তারা ড্রাইভারের মুঠোফোন নিয়ে যায়।

আফতাব উদ্দিন শাওনের নেতৃত্বে তারা সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২হাজার ৩০০ টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেন। তারপরে তারা এই লোকজনসহ গাড়ীটিকে সরকারপাড়ার ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যায়। আফতাব উদ্দিন শাওনের নেতৃত্বে তার লোকজনরা দাবি করেন এই গাড়ীতে ইয়াবা আছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তারাই

মুন্সীগঞ্জের ডিবি পুলিশকে খবর দেন। তারা ডিবি পুলিশ জানান এই গাড়ীতে একজন নারী আছে, তাই তারা যেন আসার সময় নারী পুলিশ আনেন। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিক মুনা আক্তার ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে এই ঘটনার সহযোগিতা চান।

আফতাব উদ্দিন শাওনের ডাকে সারা দিয়ে পরবর্তীতে মহিলা পুলিশসহ ৩জন ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। ডিবি পুলিশ এখানে তল্লাশী করে কারো কাছেই কোন মাদক দ্রব্য উদ্ধার করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ট্রিপল নাইনের ফোনের খবরে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা থেকে এসআই মিজানুর রহমান একদল ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। আর সেখান থেকে এই ঘটনায় প্রথমে দুইজনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত

দুইজনের খবরাখবর নেয়ার জন্য হৃদয় থানার আশপাশে ঘুরাফেরা করতে থাকে। এই সময় মুনা আক্তার পুলিশকে জানান এই ঘটনার সময় সেখানে হৃদয়ও ছিল। তখন থানার সামনে থেকে পুলিশ হৃদয়কে গ্রেফতার করে।

একাধিক সূত্র মতে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে সেতু নিচ এলাকায় মালি পাথর এলাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেয়েদেরকে এই পথে যাতায়াতের সময়ে আটকিয়ে মারধর করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার আদায় অভিযোগ উঠেছে আফতাব উদ্দিন শাওন গ্রুপের বিরুদ্ধে।

এখানে আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে এই গ্রুপের লোকজনারা মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে ও অবৈধ কারেন্টজাল বিক্রেতাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

গ্রেফতারকৃত আফতাব উদ্দিন শাওন এখানে ২০ থেকে ৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আফতাব উদ্দিন শাওন এখানে একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুজ্জামান জানান, ট্রিপল নাইনে ফোন দেন ভিকটিম। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মুনা আক্তার এই ঘটনায় বাদি হয়ে মুন্সীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা এখন জেল হাজতে রয়েছেন।

এদিকে একাধিক মহল থেকে মুনা আক্তারকে এই মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই মামলাটি রফাদফার জন্য মুনা আক্তারকে মোটা অংকের টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পিছনে একটি বিশেষ মহল কাজ করছে। তবে এই মামলায় ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা

থাকায় বিশেষ মহলটি সেইভাবে সুবিধা করতে পারছেন না জানা গেছে। একাধিক সূত্র মতে পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে এই মামলাটির বিশেষ নজরধারীতে রয়েছে। পরবর্তীতে এই ঘটনায় অনেকেই ফেঁসে যেতে পারেন বলে আশংকা করছেন অনেকেই।

Explore More Districts