মালির সম্রাটের মহাকাব্যিক হজ সফর

মালির সম্রাটের মহাকাব্যিক হজ সফর

কাফেলাটি সাহারা মরুভূমি অতিক্রম করে মিসরের কায়রোতে পৌঁছায়। সেখানে তাঁর সম্পদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং বণিকেরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। মানসা মুসা এত বেশি স্বর্ণ ব্যয় করেন যে মিসরের বাজারে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় এবং অর্থনীতিতে ধস নামে। ফেরার পথে তিনি উচ্চ সুদে স্বর্ণ ধার করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে মিসরের স্বর্ণের বাজার স্বাভাবিক হতে প্রায় এক দশক লাগে।

মক্কায় পৌঁছে মানসা মুসা হজ পালন করেন। মক্কার জ্ঞানবিজ্ঞানের সমৃদ্ধি তাঁকে মুগ্ধ করে। ফেরার সময় তিনি চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, ভূগোল, ইতিহাস, গণিত ও আইনের বই, সেই সঙ্গে মক্কার শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও স্থপতিদের সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই স্থপতিরা মালিতে পোড়া ইট দিয়ে পাঁচটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা ইসলাম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মানসা মুসার হজযাত্রা মালি সাম্রাজ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার ওপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। যেমন এই যাত্রা ইসলামকে পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। মানসা মুসা তাঁর শাসনপদ্ধতিতে ইসলামিক নীতি ও সংস্কৃতি প্রবর্তন করেন, যা শিক্ষা ও বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে।

মালির শহরগুলোতে নতুন স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণকৌশল প্রবর্তিত হয়, যা পশ্চিম সুদানে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে ছিল সাংকোরে মাদ্রাসা (ইউনিভার্সিটি অব সাংকোরে), হল অডিয়েন্স এবং গ্র্যান্ড প্যালেস। মানসা মুসা মরক্কোর মারাকেচ, মিসরের কায়রো ও আন্দালুসিয়ার টোলেডোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি তিউনিস ও মিসরের সঙ্গে মালির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপরে টিম্বাক্টু ও গাওকে তিনি জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়। সাংকোরে মাদ্রাসা বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে।

মানসা মুসার সম্পদ ও খ্যাতি মালিকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দেয়। কার্টোগ্রাফার অ্যাঞ্জেলিন ডুলসার্ট তাঁর প্রতিকৃতি মানচিত্রে অঙ্কন করেন এবং বিখ্যাত কাতালান অ্যাটলাস-এ তাঁকে স্বর্ণখণ্ড ও রাজদণ্ড হাতে সাহারার মধ্যবিন্দুতে চিত্রিত করা হয়।

(সূত্র: পুণ্যপথের যাত্রীরা: হজ হজযাত্রী ও পথ,মুহাম্মদ সাঈদ হাসান শিকদার, প্রথমা প্রকাশন)

Explore More Districts