
ইমরান হোসেন মনিম, রাজবাড়ী বার্তা ডট কম :
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে যৌতুকের দাবী পূরণ না করায় দুই সন্তানের জননী গৃহবধু আয়শা খাতুন (৩০)-এর দুই হাত ও দুই পায়ের তলা ধারালো অস্ত্রদিয়ে মারাত্বক ভাবে জখম করা হয়েছে। ওই গৃহবধুকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও শান্তিতে নেই গৃহবধু ও তার পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকার ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বে আসা ব্যক্তিরা থানায় মামলা না করে স্থানীয় ভাবে মিমাংশার চাপ প্রদান করতেও দেখা গেছে।
সরজমিনের বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা গৃহবধু আয়শা খাতুনের শয্যার পাশে জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের সদস্য বিল্লাল হোসেনসহ ওই এলাকার কয়েকজন তর্কবিতর্ক করছেন। তারা ওই গৃহবধুর পরিবারের সদস্যদের চাপ দেয় এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা যাবে না, এলাকায় বসে মিমাংশা করতে হবে। যদিও সে সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই ইউপি মেম্বর ও তার সহযোগিরা দ্রুত সটকে পরে।
জানাগেছে, সাত বছর আগে রাজবাড়ী জেলা সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ব্রাম্মনদিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে আয়শা খাতুনের বিয়ে হয় জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গেয়ালপাড়া গ্রামের আকবর মোল্লার ছেলে গিয়াসউদ্দিনের সাথে। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবীতে আয়শাকে তার স্বামীসহ ওই পরিবারের সদস্যরা নানা ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। একাধিকবার স্থানীয় ভাবে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে করে স্বামীর বাড়ীতে পাঠানো হয়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা আয়শা খাতুন বলেন, গত সোমবার দুপুরে তিনি তার স্বামীর বাড়িতে ডাক্তারের দেয়া ঘুমের ঔষধের ওভার ডোজ খাওয়ানো হয়। পরে আয়শা ঘুমিয়ে পরলে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন হাত, পা, গলাসহ বিভিন্ন স্থানে চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই পায়ের তালু, দুই হাতর কুনইসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করে। এসময় আয়শা ঘুমের মধ্যে থেকে জেগে উঠলে তারা আরো জোর করে চেপে ধরে আরো আঘাত করে। আয়শা জেগে উঠলে হাত, পা চেপে ধরা লোকজন বলে কথা বলবি তাহলে একবারে গলা কেটে চিরতরে শেষ করে ফেলবো। এই ভয়ে তখন আয়শা আর কথা বলেনা। কিছুক্ষণ পরে তাকে ছেড়ে সবাই চলে গেলে আয়শা রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় মেম্বার বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে যান। তবে ওই মেম্বর তাকে বলে “আমি শুনেছি তেমার হাত পা তুমি নিজেই কেটেছো।” তিনি তখন বুঝতে পারেন বিচার পাবে না। তাই তিনি তার মা রহিমা বেগমকে জানান। তার মা রহিমা বেগম গিয়ে আয়শাকে নিয়ে এসে বুধবার রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় আয়শার মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে আয়শার স্বামী গিয়াসউদ্দিন এবং তার অপর ৩ ভাই পলাশ, পিয়াস ও রাসিদুল ইসলামকে আসামী করে কালুখালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগকারী মোছাঃ রহিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ে আয়শাকে ওর শ্বশুর বাড়ীর লোকজন যোতুকের কারনে বিভিন্ন সময় মারপিট করত। আমরা গরিব মানুষ যৌতুক দেওয়ার সামর্থ আমাদের নাই। আমার মেয়েকে যারা মেরে ফেলতে চেয়েছে তাদের বিচার চাই।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শেখ আব্দুল হান্নান বলেন, প্রাথমিক ভাবে আয়শার হাত ও পায়ের আঘাতের ক্ষত দেখে মনে হয়েছে ধারালো কিছু দিয়ে কেউ আঘাত করেছে। নিজের দ্বারা হাতে পায়ে এভাবে কাটা সম্ভব নয়।
কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ^াস বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর মা রহিমা বেগম এসে অভিযোগ করেছেন। অভিযোটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।