মাথায় আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় শ্রমিকনেতা শহিদুলের: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন – Daily Gazipur Online

মাথায় আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় শ্রমিকনেতা শহিদুলের: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন – Daily Gazipur Online

ডেইলি গাজীপুর প্রতিবেদক : টঙ্গীতে নিহত শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামের মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন ৪৫ দিন পর পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তৈরি করেছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। বুধবার (৯ আগস্ট) রাতে হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের (মেডিসিন) এএনএমএল আল মামুন রোমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘শহিদুলের মাথায় কোনো শক্ত কিছু দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়েছে। এতে তার মাথার পেছনের অংশে ঘাড়ের একটু ওপরের একটি হাড় ভেঙে যায়। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং তিনি জ্ঞান হারান। পরে হাসপাতালে আনা হলে তার মৃত্যু হয়। শহিদুলের হৃৎপিন্ডের ত্রুটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহিদুলের হৃৎপিন্ড সংগ্রহ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে জানা যায়, শহিদুলের হৃদ্যন্ত্রে কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি হৃদ্রোগে মারা যাননি।
গত ২৫ জুন রাতে টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকার প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানায় বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ সময় দুটি শ্রমিক সংগঠন ও মালিক পক্ষের কয়েকজনের মধ্যে মারামারির ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন শহিদুল।পরে তাকে গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকার তায়রুন্নেসা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল কুমার হাসপাতালে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন।পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ পাঠায়। ২৬ জুন লাশের ভিসেরা সংগ্রহ করে ঢাকার সিআইডি কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর দিন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেন।এতে ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর পুলিশ এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি মাজাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।মাজাহারুল বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে আদালতে লিখিত আবেদন জানান মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী।আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ৬ জুলাই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় গাজীপুর জেলা শিল্প পুলিশকে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) ওসমান গনি।
শহিদুলের স্ত্রী কাজলি বেগম বলেন, আমি ক্যানসার আক্রান্ত। আমার দুটি ছেলে রয়েছে। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। আমার চিকিৎসাতে এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমি অসুস্থ তাই মামলাটির বাদী হইনি। আমাকে জানানো হয়েছে, আমার স্বামীকে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে।
মামলার বাদী কল্পনা আক্তার বলেন, মামলার পর এ পর্যন্ত পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার খবর আমাকে জানিয়েছে। আমরা শহিদুলের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। একটি সামাজিক সংগঠন শহিদুলের অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশ পেয়েছে। এ বিষয়ে আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইন চার্জ মো. শাহ আলম বলেন, মামলাটি শিল্প পুলিশ তদন্ত করছে। বাদী এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের নামেই মামলা নেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ বলেন, মাঠপর্যায়ের তদন্তে আমরা অনেকটাই নিশ্চিত ছিলাম, শহিদুলকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এটি নিশ্চিত হয়েছি। এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শহিদুলের মৃত্যুর কারণ আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। এখন হামলাকারী ও ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts