জোয়ালা বলেন, ‘ও তখন এক ছোট্ট বালক ছিল। ওর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখতে পাচ্ছিলাম। কারণ, লোকে ওর মাথায় নানা ধরনের দ্বিধা ও সংশয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। মনস্তাত্ত্বিকভাবে সে খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। হাঁটুতে চোট থাকায় ওর ফিটনেস ঠিকঠাক ছিল না; কিন্তু আমি অকপটে বলেছিলাম, তুমি হবে ভারত জাতীয় দলে খেলা আমার প্রথম খেলোয়াড়।’
জোয়ালা সিংয়ের তত্ত্বাবধানে জয়সোয়ালের মধ্যে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। জোয়ালা তাঁকে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার দিলিপ ভেংসরকার ও ওয়াসিম জাফরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মাঠের বাইরে তাঁরাও জয়সোয়ালকে পরামর্শ দিয়েছেন।
সমবয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে জয়সোয়াল সবার নজর কাড়তে শুরু করেন। তখন থেকেই লম্বা সময় ধরে ব্যাট করার সামর্থ্য ছিল তাঁর। খুব কম সময়েই তাঁকে দ্রুত আউট করার সম্ভব হয়েছে। জয়সোয়ালের লক্ষ্য ছিল একটাই—যতক্ষণ সম্ভব ব্যাট করে যাওয়া।
জয়সোয়ালের প্রতিভা বেশি দিন আড়াল করে রাখা যায়নি। ২০১৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ভারতের অনূর্ধ্ব–১৯ দলে জায়গা করে নেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ জিতলেও জয়সোয়ালই টুর্নামেন্টসেরা হন। সেই বছরই আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে কিনে নেয়।
গত বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডমিনিকা টেস্ট দিয়ে ভারত জাতীয় দলের জার্সিতে জয়সোয়ালের অভিষেক হয়। প্রথম ইনিংসেই করেন ১৭১ রান। তাতে দুটি রেকর্ডে তিনি ছাড়িয়ে যান ভারতের সাবেক দুই অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
জয়সোয়াল ভারতের হয়ে খেলতে পারায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাঁর কোচ জোয়ালা সিংয়েরও। শিষ্যের খেলোয়াড়ি জীবন গড়ে দেওয়ার পর জীবন বদলে গেছে তাঁরও। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই জোয়ালার ক্রিকেট একাডেমির অবস্থান। জয়সোয়ালকে কেন্দ্র করে কোচিংয়ে সফল হওয়ায় সবাই এখন তাঁর কাছে শিখতে চায়। মাঠে গেলেই অভিভাবকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যেন তাঁদের সন্তানকেও নিজের কাছে রেখে জয়সোয়ালের মতো কীর্তিমান বানিয়ে দেন।