আর মাত্র কয়কেদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আযহা। এই ইদ কে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ইদ যতই ঘনিয়ে আসছে উপজেলায় পশুর হাটগুলোতে বেচাবিক্রির পরিমাণ ততই বাড়ছে।
আজ শনিবার ২৪জুন, মাটিরাঙ্গার সাপ্তাহিক বাজার গুরে দেখা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পাশ ছুয়ে রাস্তার এপাশ ওপাশ মিলিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বসছে কোরবানি পশুর হাট। সলিং রাস্তার দু পাশ জুড়ে ছোট বড় মাঝারি মানের গরুতে সয়লাব। আগামী ২৯ জুন কোরবানি হবে সে হিসেবে আজই মাটিরাঙ্গা বাজারের পশুর হাটের শেষ বাজার। তাই এদিন সকাল থেকেই ক্রেতা বিক্রেতায় মুখর পুরো বাজার জুড়ে। উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট হবার দরুন আজ মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবাসায়ীরা বাজারে গরু নিয়ে আসছেন বিক্রি করতে। দেশি গরুতে মোটাতাজকরণের কোন ধরণের ঔষধ প্রয়োগ করা হয়না বিধায় দেশি গরুর চাহিদা বেশি। সে কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাবসায়ীরা এখান থেকে গরু কিনতে আসে।
এদিকে বাজার গুরে আরো দেখা যায়, ১০/১৫ টি বড় জাতের গরু নির্দিষ্ট খুটিতে বাঁধা। কয়েক টি গরুর গলায় মালা পরানো। বার বার পানি দিয়ে গা ভিজিয়ে দিতে দেখা যায়। দর্শনার্থীর অনেকে ছবি তুলে তৃপ্তি মিটাচ্ছেন। এছাড়াও মাঝারী ও ছোট আকারের অনেক গরু বাজারে দেখা গেছে। অত্র উপজেলায় ছোট ছোট কয়েকটা খামার রয়েছে। এদের দাম আকার অনুযায়ী ২লাখ থেকে শুর হয়ে মাঝারী আকারের গরুর দাম হাকা হচ্ছে ৯০ থেকে দেড় লাখ।
বাজারে ফ্রিজিয়ান জাতের একটিই বড় গরু দেখতে পাওয়া যায়। নতুন পাড়ার বাসিন্দা বারেক মিয়ার নিজস্ব খামারে লালিত গরুটি বাজারে নিয়া আসছেন। গরুটি ২লাখ দাম হাকাচ্ছেন। ৩ লাখ হলে গরুটি বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অপর দিকে অনেক বড় বড় খাসি ছাগল বাজারে দেখা যায়। সামর্থ্যবান অনেকে গরুর পাশাপাশি খাসি দিয়েও কোরবানি দিয়ে থাকেন। বড় আকারের একটি খাসি ৬০ হাজার টাকা দাম হাকাচ্ছেন খাসির মালিক।
এদিকে অনেক বেপারী বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু ক্রয় করে থাকেন। একই সাথে এসব পশু বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। তবে অনেকে বাড়তি আয় করার জন্য গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ ব্যাবহার করে থাকেন।
হাটে দেশীয় প্রজাতির গরু ও ছাগলের আধিক্য বেশী থাকায় সকলে এ দুই প্রজাতির পশু দিয়েই কোরবানি করেন।
এই বিষয়ে আরও
মাটিরাঙ্গা সদর সহ অত্র উপজেলার খেদাছড়া, বেলছড়ি, গোমতী, শান্তিপুর, রামশিরা, বোর্ডঅফিস, ডাকবাংলা, তবলছড়ি, ও তাইন্দং বাজারে নিজেদের সুবিধাজনক দিনে কোরবানির পশুর হাট বসে। স্থানীয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু ব্যাবসায়ী ও কোরবানিদাতা গণ এসব বাজার থেকে গরু, ছাগল ক্রয় করে থাকেন। দেশী গরুর কদর বেশী হওয়ায় এসব স্থান থেকে পশু ক্রয় বিক্রয়ে আগ্রহ বেশী অনেকের। সেকারণে কোরবানির ঠিক কাছাকাছি সময়ে দাম থাকে চড়া, আর তখন পশুর সংকটও দেখা দেয়।
গত বছরের তুলনায় এ বছরের কোরবানির চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না। নিত্যপণ্যের দাম বেশী হবার দরুন কোরবানিদাতার সংখ্যা কমতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ বছর কোরবানিদাতার সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমবেশি হতে পারে। মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় কোরবানি যোগ্য মোট পশুর সংখ্যা ৫৮৯ টি। মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নে ৫৮৪ টি, গোমতীতে ৬৫০ টি, বেলছড়িতে ৬৭০ টি, আমতলী ৪৪৫ টি, বড়নাল ৫২৫ টি, তবলছড়িতে ৬৩৮ টি, তাইন্দং, ৭৫০ টি সহ মোট ৪৮৫১ টি কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলায় কোরবানির চাহিদা আছে ২৫৭১ টি পশুর। ২২৮০ টি পশু উদ্বৃত্ত আছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ষাড় রয়েছে ১৯৭৪ টি। বলদ আছে ৯০২ টি। ২৭৮টি গাভি সহ মোট গরু আছে ৩১৫৪ টি গরু রয়েছে। ১৬৯৭ টি ছাগল সহ মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মোট কোরবানি যোগ্য পশু আছে ৪৮৫১ টি।
গরু ব্যাবসায়ী আজিম উদ্দিন বলেন, এ বছর ব্যাপক গরু ছাগলের সমগম হলেও গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম বেশী ক্রেতার সংখ্যা ও রয়েছে বেশ। গো-খাদ্যের দাম বেশি বিধায় পশুর দাম বেশি। উপযুক্ত দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
চট্রগ্রাম থেকে গরু ক্রয় করতে আসা আসাদ জানান, আমরা সব সময় এ উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে নিজের এবং আত্মীয় স্বজনদের জন্য গরু ক্রয় করে থাকি। গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি বলে মনে হলেও আমরা নিজেদের চাহিদা মোতাবেক গরু ক্রয় করবো।
স্ব-স্ব এলাকার পশু দিয়েই নিজেদের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (অ.দা.) ডা: সমাপন চাকমা জানান, অত্র উপজেলার ৮টি বাজারে মেডিকেল টিম কাজ করবে, তারা সুস্থ ও অসুস্থ’ পশু চিহ্নিতকরনের কাজে সকলকে সহযোগিতা করবে। গত কয়েক বছর ধরে যতেষ্ট পরিমাণে কোরবানি করার মতো উপযুক্ত পশু রয়েছে। এছাড়াও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার বাহিরে পশু সরবরাহ করার মতো যতেষ্ট পশু রয়েছে বলেও তিনি জানান।