মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
শ্রীপুরে মসজিদ কমিটির উত্তোলিত টাকার হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত মাগুরা জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্য মিরান হোসেন মল্লিক (৪৩) মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার নাকোল গ্রামের মৃত সুলতান মল্লিকের ছেলে।মিরানের পরিবারে ৭ বছর ও ৫ বছরের ২ টি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী, মা, মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ বড় ভাইসহ ৮ সদস্যের পরিবারে তিনিই ছিলেন একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা রাত সাড়ে ১০ টার দিকে হামলায় জড়িত ওই মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি স্থানীয় বিএনপি নেতা জামিরুল ইসলামের নাকোল গ্রামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এ সময় শিহাব মল্লিক ও সিরাজ মল্লিকের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বেশ কয়কটি ঘর ভস্মীভূত হয়।
অন্যদিকে ওইদিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মাগুরা জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াসিকুর রহমান কল্লোলের নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মাগুরা সদর থানার সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নাকোল মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন একই গ্রামের বাসিন্দা ও গ্রাম্য মাতবর জামিরুল ইসলাম ওরফে ধলা। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করলেও জামিরুল মসজিদের আয়–ব্যয়ের হিসাব ঠিকমতো প্রকাশ দিতেন না। বিষয়টি নিয়ে যুবদল নেতা মিরান হোসেন প্রতিবাদ জানালে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। ঈদের পরদিন মসজিদের হিসাব নিয়ে বসার কথাও ছিল উভয় পক্ষের। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগের রাতে নাকোল বাজার চৌরাস্তায় জামিরুল ইসলামের লোকজনের সঙ্গে যুবদল নেতা মিরান হোসেনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেলা কাঠ দিয়ে মিরান হোসেনের মাথায় আঘাত করেন জামিরুল ইসলামের লোকজন। এতে গুরুতর আহত হন মিরান। ওই রাতে প্রথমে তাঁকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে ঢাকায় নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৮ টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর হত্যাকান্ডের ঘটনায় কেন্দ্রীয় যুবদল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহম্মেদ, ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন সোহানসহ মাগুরা জেলা ও উপজেলা যুবদল, বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। সেই সাথে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই মিরানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন রাতে নাকোল বাজারে সবার সামনে জামিরুল ইসলাম, তাঁর দুই ছেলে ইমন, ইকবাল, ভাতিজা রবিউল ইসলাম, মুন্না, জিন্নাসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে হামলা চালান। সবার সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তারা আরো জানান, ঢাকা থেকে লাশ ময়নাতদন্তের পর নাকোল রায়চরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে রোববার বাদ আসর জানাজার নামাজ শেষে রায়নগর সম্মিলিত কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইদ্রিস আলী জানান, মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।