কেসিসি মেয়রের প্রতিশ্রুতির
বাস্তবায়ন দাবি এলাকাবাসীর
এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আর ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল। মাঝখানে বয়ে চলা ময়ূর নদীই এর সীমানা। কিন্তু একটি বাঁশের সাঁকোই সেই খন্ডিত নদীকে ভেদ করে দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে করেছিল সেতুবন্ধন। খুব সহজেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, খুলনা মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সরকারি জয়বাংলা কলেজ, খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়(মন্নুজান স্কুল)সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি নিউমার্কেটসহ খুলনা শহরের সাথে সেতুবন্ধনের সুতিকাঘার ছিল ওই বাঁশের সাঁকোটি। কিন্তু কেসিসির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ময়ূর নদী সংস্কারের এক পর্যায়ে ওই সাঁকোটি ভেঙ্গে ফেলার ফলে আজ সেই সেতুবন্ধনে চিড় ধরেছে। যদিও এখন সেখানে সংস্কারের সুবিধার্থে দেওয়া বাঁধের তিনটি স্তরে তিনটি সাঁকো তৈরি করে এলাকাবাসী অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন। তবে সাঁকোটি ভেঙ্গে ফেলার পর কেসিসি মেয়র সেখানকার বাসিন্দাদের আশ^াস দিয়েছিলেন, ময়ূর নদীর ওই স্থানটিকে ঢাকার হাতির ঝিলের আদলে সাজানো হবে। আর তার আগ পর্যন্ত এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধার জন্য আগের ন্যায় তৈরি হবে বিকল্প সাঁকো। এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা সিটি মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দাবি করেন।
খুলনা মহানগরীর ছোট বয়রাস্থ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের মাদ্রাসা রোড দিয়ে দক্ষিণে গিয়ে আব্দুর রহমান সড়ক হয়ে পশ্চিমের ময়ূর নদীর ত্রিমোহিনীতে তৈরি হওয়া ওই সাঁকোটি ভেঙ্গে ফেলা হয় গত ১৩ মে। সেই থেকে দু’পাড়ের বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয় বয়রা শ্মশানঘাট এলাকা থেকে। যদিও শ্মশান ঘাট থেকে খুলনা বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটি কার্পেটিং করায় বয়রা, হাসানবাগ, করিমনগরসহ আশপাশের বাসিন্দাদের গল্লামারী, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়, জিরো পয়েন্ট এলাকায় যাতায়াতের পথ সহজ হয়েছে। তাছাড়া সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও গল্লামারীর যানজট এড়াতে অনেকেই এখন বিকল্প হিসেবে ওই রাস্তাটি ব্যবহার করছেন। এজন্য ময়ূর নদীর ওই ত্রিমোহিনীতে সেতুটি হলে তাদের যাতায়াতের পথ আরও সহজ হতো বলে মনে করছেন অনেকে।
নগরীর ছোট বয়রার বাসিন্দা শওকত আলী বলেন, তার একমাত্র ছেলে খুলনা বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন এ এইচ দেলদার আহমেদ স্কুলের ছাত্র। বাঁশের সাকোটি থাকা পর্যন্ত তিনি ওই সাঁকো দিয়েই আরাফাত এলাকা ও খুবির ছাত্রহল হয়ে স্কুল থেকে তার ছেলেকে আনা-নেওয়া করতেন। কিন্তু সাঁকোটি ভেঙ্গে ফেলায় তাকে এখন শ্মশানঘাট হয়ে ঘুরে যেতে হয়। তা’ না হলে সোনাডাঙ্গা ও গল্লামারীর যানজট ডিঙ্গিয়েই তাকে যেতে হয় ওই স্কুলে।
এলাকাবাসী জানান, ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছিল ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে। পরবর্তীতে সেতু এলাকায় পরিদর্শানে গিয়ে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সেখানে কনক্রিটের সেতু করার প্রতিশ্রুতি দেন। কেসিসির পরিকল্পনা শাখাও এজন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বলে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার জানিয়েছেন। যদিও সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ থেকে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। নদী রক্ষার স্বার্থে খুব বেশি জনস্বার্থ জড়িত না থাকলে ময়ূর নদীর ওপর আর কোন সেতু তৈরি হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে। এমনটি জানিয়ে কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, যেহেতু বয়রা ত্রিমোহনীর ওই স্থানে সংযোগ সড়ক খুব সরু সেহেতু আপাতত: সেতু নির্মাণ হচ্ছে না।
এলাকাবাসী জানান, ২০২১ সালে বাঁশের সাকোটি নির্মাণের পর থেকে খুলনা শহরের সাথে শহরতলী বিশেষ করে শ্মশান ঘাট, আরাফাত আবাসিক এলাকা, আল আকসা নগরসহ গুটুদিয়া ইউনিয়ন তথা কেএমপির হরিণটানা থানা এলাকার জনসাধারনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু ময়ূর নদী সংস্কারের কারণে সেটি ভেঙ্গে ফেলায় আবারও দুর্ভোগে পড়েন ওইসব এলাকার মানুষ। এজন্য যান চলাচল না হলেও জনবহুল ওই এলাকায় আপাতত: একটি বিকল্প বাঁশের সাঁকো জরুরি বলেও তাদের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ময়ূর নদীর খননের স্বার্থে দীর্ঘদিনের বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে ফেলা হলেও সেখানে পুন:সেতু নির্মাণ তাদের একমাত্র দাবি। এ ব্যাপারে সিটি মেয়রের কাছে লিখিত আবেদনও করা হয়েছিল। তিনি নির্বাচনের পর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দিয়েছিলেন। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে সাঁকোটি নির্মাণ হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হতো বলেও তিনি মনে করেন।