মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচন করবেন কুমিল্লার ৮ উপজেলায় – Ajker Comilla

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচন করবেন কুমিল্লার ৮ উপজেলায় – Ajker Comilla

news-image

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু:

কুমিল্লা জেলাজুড়ে উপজেলা নির্বাচনের উৎসব শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের ভাই, শ্যালক ও ভাতিঝাকে প্রার্থী করাচ্ছে। যেখানে আত্মীয়-স্বজন নেই , সেখানে নিজের পচ্ছন্দনীয় কর্মীকে প্রার্থী করানো হচ্ছে । আবার ভোট দেখানোর জন্য ডামি প্রার্থীও প্রস্তুত করে রেখেছেন । প্রকৃতপক্ষে দলীয় নির্দেশনা পাত্তা পাচ্ছে না কুমিল্লায়।

৮ মে প্রথম ধাপে জেলার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মেঘনা ও নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

লাকসাম উপজেলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী ভাইস-চেয়ারম্যান পদে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন। তিনি দুই দফায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের আপন ভাতিঝা আমিরুল ইসলাম ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোট দেখানোর জন্য কয়েকজন ডামি প্রার্থীও রয়েছেন। যারা নামমাত্রেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। গত কয়েকটি উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কখনো একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছে, আবার কখনো শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় নামমাত্র নির্বাচন হয়েছে। ফলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি বেশিরভাগ ভোটার। এবারের নির্বাচনেও লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না বলেই মনে করেন একাধিক সূত্র।

দলীয় নির্দেশনা অমাণ্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী ও আমিরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলে মুঠোফোন সংযোগে তাদের পাওয়া যায়নি।

লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. ইউনুছ ভূইয়া বলেন, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। নির্বাচন থেকে সরে আসা সম্ভব নয়। দলীয় নির্দেশনা পেতে দেরি হয়েছে।

২য় ধাপে ২১ মে সদর, সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সদর উপজেলায় কোন নির্বাচন হচ্ছে না। কোন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় সদর সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিনের সমর্থিত চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

সদর দক্ষিণে স্থানীয় সাংসদ সাবেক অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামালের ছোট ভাই গোলাম সারোয়ার চেয়ারম্যান পদে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন । তিনি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি এ নিয়ে টানা তিন দফায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দলীয় নির্দেশনা আসার পর গোলাম সারওয়ার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এক যৌথ সভার সিদ্ধান্তে আমাকে চেয়ারম্যান প্রার্থী পদে নাম ঘোষণা করেছে। সদর দক্ষিণ উপজেলাবাসী ও আমার সব নেতাকর্মীর চাপে দলের বিভাজন দূর করতে, দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের মানসম্মান রক্ষার্থে আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনলাইনে আমি চেয়ারম্যান পদে আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে আমি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী কাজ শুরু করেছি। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন এবং এই উপজেলায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এটা আমার প্রত্যাশা।

বরুড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক মোঃ হামিদ লতিফ ভুঁইয়া কামাল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

তৃতীয় ধাপে ২৯ মে বুড়িচং, বি-পাড়া, মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দেবিদ্বার উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মো. মামুনুর রশিদ মামুন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামুন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কর্মীসভায় স্থানীয়দের সাথে নির্বাচনী মতবিনিময় করছেন।

মুরাদনগর উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর পুনরায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বি-পাড়া উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ আবু জাহেরের ভাতিঝা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু তৈয়ব অপিও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রার্থীতা জানান দিয়ে বক্তব্য রাখছেন। তাঁর মত বিনিময় ও জনসভাগুলোতে প্রচুর মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দলীয় নির্দেশনার বিষয়ে আবু তৈয়ব অপি জানান, দলীয় নির্দেশনায় বলা আছে, দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমার চাচা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন । আর স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচিত এমপিদের দলীয় কোঠায় বিবেচনা করা হচ্ছে না। ফলে আমার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোন সাংগঠনিক সমস্যা দেখছি না।

চতুর্থ ধাপে জেলার হোমনা, তিতাস, চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।

হোমনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুনরায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন রেহানা মজিদ। তিনি বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদের সহধর্মিনী।

আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে এটিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যদি শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বার্তাটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের যারা এমপি, মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তারা কতজন নিজের আত্মীয়স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন তার তালিকা তৈরি করছেন।

Explore More Districts