চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ সড়ক এখন পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে দেড় শতাধিক গর্ত। এতে প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় পথচারী ও যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের মোহনপুর, ষাটনল, শিকিরচর, এখলাসপুর, নন্দলালপুর, সাহেববাজার ও আমিরাবাদ এলাকায় সড়কের দুই পাশে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও পিচ উঠে গেছে, আবার কোথাও গর্ত এত গভীর যে ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রতিনিয়ত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় হলেও এর ওপর নির্মিত সড়কটির দায়িত্ব সওজ বিভাগের। এই সড়ক দিয়ে মতলব উত্তর ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে।
অটোরিকশাচালক রোবেল হোসেন বলেন, “রাস্তা তৈরির দুই-তিন বছর পরই গর্ত তৈরি হয়। এখন প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু অসাবধান হলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।”
মোটরসাইকেলচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতে অবস্থা ভয়াবহ। দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না, ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ে।”
পিকআপচালক আব্দুর রহমান বলেন, “রাতে গর্তগুলো চোখে পড়ে না। তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়েই গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। কিন্তু গর্তের কারণে এখন দুর্ঘটনা বাড়ছে। আমরা সওজ বিভাগকে একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের প্রধান যোগাযোগ পথ। সওজ বিভাগের অবহেলায় মানুষের জীবন এখন ঝুঁকির মুখে। বর্ষার আগেই পূর্ণাঙ্গ সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।”
চাঁদপুর সওজ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “অতিবৃষ্টির কারণে সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করেছি এবং আরও ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, “মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্বাংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিমাংশ ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে; তাদের দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চ. দা.) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরের সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা ব্যবস্থা নিই, তবে সড়ক সংস্কার করতে হবে সওজকেই।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হবে।”
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক
১২ নভেম্বর ২০২৫

