১ ডিসেম্বর ২০২৩ শুক্রবার ৭:২৫:৫৪ অপরাহ্ন |
চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স। সংস্থাটি দুটির সক্ষমতার অভাবে ফের ভোলার পাঁচ কূপ খননের কাজ দেয়া হচ্ছে রাশিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে। তবে বাপেক্সের আবিষ্কার করা এই কূপগুলোতে অতিরিক্ত ব্যয়ে কাজ পাচ্ছে তারা। এ ছাড়া দরপত্র ছাড়া রাশিয়ার এই কোম্পানিকে কাজ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
বাপেক্স সূত্র বলছে, একটি কূপ খননে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা খরচ করে তারা। অন্যদিকে সর্বশেষ ২০২০ সালে তনটি কূপ খননের কাজ পেয়ে গ্যাজপ্রম প্রতিটির জন্য নিয়েছে ১৮০ কোটি টাকার বেশি। গ্যাজপ্রম সব কূপ খননের কাজ পেয়েছে দরপত্র ছাড়া। বিদ্যুৎ-জ্বালানি বিভাগের বিশেষ বিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি গ্যাজপ্রম বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রস্তাবও দিয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ কূপের কাজটি দেয়া হতে পারে রাশিয়ান এই কোম্পানিকে। বাপেক্সের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ‘বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-২০১০’ অনুসারে রাশিয়ান কোম্পানিকে দিয়ে পাঁচ গ্যাসকূপ খনন করার অনুমতি চেয়ে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এর আগে চিঠি পাঠিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। গ্যাজপ্রম গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের গ্যাস উত্তোলনের কূপ খননের কাজ করছে। কোম্পানিটি এরই মধ্যে ২০টি কূপ সফলভাবে খনন করেছে এবং প্রতিটি কূপে গ্যাস পেয়েছে। গ্যাজপ্রম নতুন যে কূপগুলোর কাজ পাচ্ছে সেগুলো হলো ভোলায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, শাহবাজপুর নর্থইস্ট-১, ভোলা নর্থ-৩ ও ভোলা নর্থ-৪। এই কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল তাদের কার্যকর ও দক্ষ কূপ নির্মাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ২০ টি কূপের নির্মাণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ২০ কূপ খননের মাধ্যমে প্রায় ৪.৫ টিসিএফ গ্যাসের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আবিষ্কার করেছে। এখন এই ২০টি কূপের মধ্যে ১৮টি কূপ জাতীয় গ্রিডে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। ১৩ বছরে কোম্পানিটি বাংলাদেশের জন্য মোট ০.৬ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদন করেছে। গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনালের কূপ নির্মাণ ব্যয় গড়ে ১৭.৩৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাপেক্স কূপ নির্মাণ ব্যয় (গড় খরচ ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং অন্যান্য আইওসি (শেল, ইউনিকোল, শেভরন, টুলো, ক্রিসেনার্জি) কূপ নির্মাণ ব্যয় (গড়) এর চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী খরচ ২৩ মিলিয়ন ডলার।
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স সূত্র জানায়, এই কূপগুলো থেকে দৈনিক প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বাড়ানো যাবে।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের পর দেশে রিজার্ভ ঘাটতির ফলে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। গত বছরের শুরুতে স্থলভাগে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৪ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছিল পেট্রোবাংলা। এসব কূপ থেকে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য ধরা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, গ্যাজপ্রমকে পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের রিগ (খননযন্ত্র) বাংলাদেশে আছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে কূপ খনন শুরু করতে পারবে তারা।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব জানান, দেশে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস দরকার। বাপেক্সের সব খননযন্ত্র কাজে আছে, কোনোটি বসে নেই। দ্রুত গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে সমান্তরালভাবে গ্যাজপ্রমকে দিয়েও কূপ খনন করা হচ্ছে। খননকাজের কার্যাদেশ আমরা নির্বাচনের আগেই দিয়ে দেবো। ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম বলেন, কষ্ট করে বাপেক্স গ্যাস আবিষ্কার করেছে, উৎপাদন করা তো কোনো ব্যাপারই না তাদের জন্য। নানা বিবেচনায় দরপত্র ছাড়াও অনুসন্ধানের কাজ দেয়া যেতে পারে। তবে বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে বিদেশি ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কূপ খনন মোটেই যৌক্তিক নয়। এতে খরচ হবে দ্বিগুণের বেশি। এটি জাতীয় স্বার্থেরও বিরোধী।
উল্লেখ্য, ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের এই কাজ দেয়া হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে ৪৬টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন ও পুনর্খনন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। তার মধ্যে বাপেক্স ২০টি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ১২টি এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড ১৪টি কূপ খনন করছে।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |