৩১ August ২০২৫ Sunday ১১:৩৪:২০ AM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
কলাপাড়া ((পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর কলাপাড়া এক সময় ছিল শান্ত-অবহেলিত এক উপকূলীয় উপজেলা। কিন্তু এখন বদলে গেছে চিত্র। পায়রা সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কুয়াকাটাকে ঘিরে প্রতিদিন বাড়ছে এ অঞ্চলের গুরুত্ব। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পদচারণা বেড়েছে, জমির দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। মানুষের মনে জেগেছে উন্নয়নের স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্নের ভেতরেই দানা বাঁধছে ভয় ও অনিশ্চয়তা। কারণ, উন্নয়নের সমান্তরালেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা একটি প্রভাবশালী চক্র জমি দখল ও প্রতারণাকে ‘ব্যবসায়’ রূপ দিয়েছে। এক সময় সরকারি অধিগ্রহণের জমিতে মামলা টুকে বা খুঁটি গেঁড়ে ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত তারা। এখন সেই কৌশল আরও চতুর হয়েছে। বিশেষ করে রাখাইন সম্প্রদায়ের কিছু দালাল এতে জড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগ আছে, তাদের পূর্বপুরুষের বিক্রিত জমিতে নতুন করে মালিকানা দাবি করা হচ্ছে। কখনও আবার কক্সবাজার, টেকনাফ কিংবা উখিয়া থেকে কাউকে ভুয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে আদালতে মামলা করা হচ্ছে। ১৯৬২–৬৩ সালের বালাম বই, ১৯৬৫ ও ১৯৭০ সালের বন্যায় নষ্ট হওয়া রেকর্ডকে পুঁজি করেই চলছে এ প্রতারণার খেলা।
এভাবেই দীর্ঘ দুই–তিন দশক ধরে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে অনেকে এখন ধনাঢ্যের তালিকায়। এলাকায় প্রচলিত আছে— ‘ভূমিদস্যুতার টাকায় অনেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ।’
টিয়াখালী ইউনিয়নের সলিমুল্লাহ তালুকদার ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘জমিতে খুঁটি বসানো কিংবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে মামলা করা এখন লাভজনক ব্যবসা হয়ে গেছে। এতে জমির মালিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ এ কাজে জড়িত।’
রাখাইন দামো মাতুব্বরও স্বীকার করে বলেন, ‘ভুয়া ওয়ারিশ সাজানোর ঘটনা আছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।’
নাগরিক ঐক্যের কলাপাড়া আহ্বায়ক কমরেড নাসির তালুকদার বলেন, ‘ভূমিদস্যুরা শুধু জমি দখলই করছে না, সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বালাম বই ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটিয়েছে। প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এদের থামানো সম্ভব নয়।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন,
‘ওয়ারিশ সনদ দেয়ার আগে ইউপি চেয়ারম্যানদের সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। নামজারির সময় তহসিলদার সরেজমিন তদন্ত করবেন। বিশেষ করে রাখাইনদের ক্ষেত্রে আদালতের সনদ সংযুক্ত হলে ভূমিদস্যুতার অনেক পথ রুদ্ধ হবে।’
ভূমিদস্যুতার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি থমকে যাচ্ছে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। দিন দিন নিরুপায় হয়ে পড়ছে মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিংবা প্রশাসন কেউ কার্যকরভাবে এগিয়ে না এলে এই দস্যুতার ভয়াবহতা কেবল বাড়তেই থাকবে।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |