ভূমিকম্পের আশঙ্কা বৃদ্ধির কারণে প্রস্তুতি জোরদার করা প্রয়োজন

ভূমিকম্পের আশঙ্কা বৃদ্ধির কারণে প্রস্তুতি জোরদার করা প্রয়োজন

বাংলাদেশ দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যাকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশ দুর্যোগের দেশের পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু এ দুটি দুর্যোগ বাদেও এখন বজ্রপাত দুর্যোগ তালিকায় স্থান পেয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্প এক্ষেত্রে খুব একটা আলোচনায় আসে না। বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, সিলেট বিভাগ খুব ঝুঁকির অঞ্চল। সিলেটের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পে কাঁপল সারা দেশ। ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায়ও। গতকাল রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভারতের আসাম অঙ্গরাজ্যের করিমগঞ্জ থেকে ১৮ দশমিক ২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তে এর অবস্থান। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল আসামের করিমগঞ্জ থেকে ১৮ দশমিক ২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, সিলেট থেকে ৩৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে, আসামের বদরপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে এবং সিলেটের ছাতক থেকে ৫৫.৭ কিলোমিটার পূর্ব দিকে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। অন্যদিকে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের তথ্যমতে, এ সময় ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। আর গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্টস সিস্টেম বলছে, বাংলাদেশের সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার চার কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি। ভূমিকম্প বাংলাদেশ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমারেও অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাঝারি ধরনের এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিস থেকে ২৪১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আসামে। ভূমিকম্পটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার ও ভুটানে অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটি আসাম সিলেটকেন্দ্রিক ডাউকি ফল্ট এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। এ ফল্টটা বিপজ্জনক ফল্ট হিসেবে পরিচিত।’ দেশে বিপজ্জনক ভূকম্পনের প্রধান উৎস হচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার ডাউকি ফল্ট। ১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টের পূর্ব প্রান্তে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, কিন্তু ডাউকি ফল্টের পশ্চিম প্রান্তে ৪০০ বছর ধরে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। বাংলাদেশ এবং এর আশপাশে সংঘটিত বড় ধরনের ভূমিকম্পের মধ্যে ১৭৬২ সালে আরাকানে, ১৮৮৫ সালে গ্রেট বেঙ্গল আর্থকোয়াক, ১৮৯৭ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়াক, ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল আর্থকোয়াক অন্যতম। এসব ভূমিকম্পের ফলে বাংলা অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ জানায়, গত ২৩ বছরে ঢাকার আশপাশে চারটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ২০০১ সালে বুড়িগঙ্গায়, ২০০৮ সালে চাঁদপুরে, ২০০৯ সালে ময়মনসিংহ এলাকায়। এসব ভূমিকম্পের প্রত্যেকটি রিখটার স্কেলে ৪ থেকে ৫ মাত্রার। প্রত্যেকটি ভূমিকম্পের পর ঢাকাকে সুরক্ষিত করা নিয়ে আলোচনা হয়। গত জুনে সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকায়, ফেব্রুয়ারিতে ছাতকে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ২০২১ সালের জুনে টানা দশ দিন ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেটে। ঢাকা এবং সিলেটে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটনের অতি সম্ভাব্য অঞ্চল হিসেবে দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু বিষয়টি এ মনে করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমরা মনে করি ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার আমাদের তেমন কোন প্রস্তুতি নেই। এ প্রস্তুতি না থাকাটাও আমাদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু ভূমিকম্পের কোন আগাম সংকেত দেয়া যায় না তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেশী প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশের সকল অবকাঠামোকে বিল্ডিং কোডের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য ভাব কাম্য নয়। আমরা বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকম্পের বিষয়টি অনেক বেশী গুরুত্ব পাবে এ প্রত্যাশা করছি। আমরা মনে করি, ভমিকম্পের আশংকা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন জরুরি হচ্ছে প্রস্তুতি নেওয়ার। দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় আলাদাভাবে একটি উইং করা যেতে পারে। যেখানে ভূমিকম্প বিষয়ক নানা প্রস্তুতি ও উদ্ধার তৎপরতাসহ এ বিষয়ে নানা কার্যক্রম চলমান রাখা যেতে পারে।

 

Explore More Districts