
এ এস খোকন, ভুরুঙ্গামারী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২ যুবককে মারধর করেছে প্রতিপক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের সড়ককাটা বাজারে। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় সড়ককাটা বাজারের একটি মোবাইল ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের মারধর করা হয়। মারধরের শিকার এমক যুবক আব্দুর রশিদ বর্তমানে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামের আব্দুর রশিদের সাথে ওই একই গ্রামের মুনসুর আলীর জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিবাদ চলে আসাছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আব্দুর রশিদ ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে ১ একর ৪১ শতাংশ জমির উপর গত ১২ অক্টোবর ২০২২ কুড়িগ্রাম কোর্টে ১৪৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার নোটিশ পাওয়ার পর গত ১৩ অক্টোবর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন উপজেলার সড়ককাটা বাজার থেকে আব্দুর রশিদ ও নাজিম উদ্দিনকে তুলে প্রথমে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করে পরে আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। এ সময় নাজিম উদ্দিন পিতা শরফত আলী ভুরুঙ্গামারী থানায় অভিযোগ করলে ভুরুঙ্গামারী থানার এসআই আতাউর রহমান ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। পরদিন (১৪ অক্টোবর) মারধরের শিকার আব্দুর রশিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে ভুরুঙ্গামারী সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। অপর যুবক নাজিম উদ্দিন প্রাথমিক চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে মারধরের শিকার আব্দুর রশিদ জানান, পৈতৃক ও ক্রয় সুত্রে প্রাপ্ত জমি আমার বোন নাসিমা বেগম, শিরিনা বেগম ও ভাগিনা নাজিম প্রায় ২৫/৩০ বৎসর যাবত ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তু মনসুর আমরা জমি পাব না বলে কৌশলে বোন নাসিমা বেগমকে ৫০ হাজার, শিরিনা বেগমকে ৫০ হাজার ও ভাগিনা নাজিমকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে জমির দখল নিয়ে বলে জমির কাগজপত্র দেখাতে পারলে তোদের জমি ফেরত দিব। পরে খোঁজাখুজির পর জমির জাবেদা দলিল উঠিয়ে আনলে আমরা আমাদের জমি ফেরত চেয়ে না পেলে কুড়িগ্রাম কোর্টে ১৪৪ ধারায় মামলা করি। মামলার নোটিশ পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সড়ককাটা বাজারে মিঠুর ফ্লেক্সি লোডের দোকান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আনোয়ার, আজমল, আজিজুর, কালাম সহ আরও অনেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করে পরে পুলিশ প্রশাসনকে জানালে পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান আমিতো কোন টাকা নেইনি আমাকে কেন মারধর করা হলো। আমি এর বিচার চাই।
অপর যুবক নাজিম বলেন, ঘটনার আগের রাতে আনোয়ার আমাকে ফোন দিয়ে পাওনা টাকা নিয়ে মিঠুর দোকানে আসতে বললে আমি পরদিন টাকা নিয়ে শাফি ও সাইদুরের দোকানে এসে টাকা পয়সা হিসাব করে রশিদের কাছে দেই। তারপর আনোয়ার এসে আমাকে মিঠুর দোকানে ডেকে ভিতরে নিয়ে টাকার বিষয়ে আলোচনা করাবস্থায় আনোয়ার আমার শাটের কলার ধরে মারধর করাবস্থায় আরও ১০-১২ জন এসে আমাকে ও আব্দুর রশিদকে মারধর করতে করতে অটোতে ফেলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আরও মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে ইউপি সদস্যদের মধ্যস্থতায় রক্ষা পাই এবং আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সই স্বাক্ষর নেয়া হয়।
এ ঘটনায় বাজারের মুদি দোকানদার ফজলুল হক জানান, ঘটনার দিন বেশ কয়েকজন মিলে রশিদ ও নাজিমকে অটোতে ফেলে পারা দিয়ে ধরে নিয়ে যায়।
অপর মুদি দোকানী সাইদুর রহমান বলেন, নাজিম আমার দোকানে এসে টাকা হিসাব করতে থাকে এমতাবস্থায় আনোয়ার এসে মিঠুর দোকানে ডেকে নিয়ে যাওয়া মাত্রই কয়েকজন নাজিম ও রশিদকে লাথি, ঘুষি মেরে অটোতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে মনসুর আলী মারধরের ঘটনা অস্বীকার করলেও সড়ককাটা বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়ার কথা স্বাীকার করে বলেন, টাকা ফেরত না দেয়ায় রশিদ ও নাজিমকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মধ্যস্থতায় রোববার (১৬ অক্টোবর) টাকা দিবে মর্মে স্বীকারুক্তি দিয়েছে।
এ ঘটনায় ভুরুঙ্গামারী থানার এস আই আতাউর রহমান জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল হয়ে আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নাজিম ও রশিদকে উদ্ধার করি। মারধরের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।