আপডেটঃ 6:05 pm | March 22, 2022
মো: নাজমুল হুদা মানিক ॥ ভাষা সৈনিক ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার মৃত্যুবাষির্কী ২৩ মার্চ। তিনি ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। জননেতা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে মরহুমের কবর জিয়ারত, দোয়া ও পুস্পস্তবক অর্পন কর্মসুচী পালন করা হবে। ২৩ মার্চ সকাল ৯টায় গোলকীবাড়ী কবরস্থানে জননেতা রফিক উদ্দিন ভুইয়ার কবর জিয়ারত, দোয়া ও পুস্পস্তবক অর্পন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক শওকত জাহান মুকুল। এছাড়া নামের রফিক উদ্দিন ভুইয়ার নামে সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলাদা কর্র্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালনের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামে ১৯২৮ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে অংশ নেন। এর আগে ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের বীর সৈনিক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া নান্দাইল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘকাল ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়াকিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া নান্দাইল সদরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ ( বর্তমানে সরকারি) প্রতিষ্ঠা করেন। বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও ভাষাসৈনিক রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার গভর্ণর ছিলেন। ময়মনসিংহ-১৩ ও ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি পরিচিত। তার পিতা ওয়াফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া। রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ১৯৪৭ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন। আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ঢাকা সফরের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত জনসভায় অংশ নেন। জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে উপস্থিত ছাত্রদের সাথে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ জেলা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মনোনীত হন। সে সময় আন্দোলনে অবদান রাখায় আড়াই বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়লাভের পর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শামসুল হক এম.পি, রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া এবং বিগ্রেডিয়ার সনত সিং উপস্থিত ছিলেন। সাদামাটা জীবন ও নীতিবান মানুষ হিসেবে পরিচিত জননেতা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার নামানুসারে ময়মনসিংহের স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে “রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম”।