আপডেটঃ 11:42 pm | February 03, 2022
মো: নাজমুল হুদা মানিক ॥ ময়মনসিংহের থানাঘাটস্থ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় ভাষা সৈনিক মোস্তফা এম.এ মতিন স্মরণে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য সেবা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। ময়মনসিংহ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে ক্যাম্পিং ব্যবস্থাপক হিসাবে ছিলেন মাসিক জনপ্রশাসন ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্পাদক রবিন বরকত উল্যাহ। সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জামালপুর সমিতিরি সভাপতি শফিক উল্লাহ ও ক্যাব ময়মনসিংহের সভাপতি এডভোকেট আবুল কাশেম এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এম এ রাজ্জাক, বীরমুক্তিযোদ্ধা সেলিম সাজ্জাদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, বীরমুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকার, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন বেগ, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুজ্জামান, বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম, মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট রাশেদা তাহমিনা প্রীতি সহ শতাদিক বীরমুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।ভাষা সৈনিক মোস্তফা এম. এ. মতিন স্মরনে ৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, থানারঘাটে স্বাস্থ্য সেবা ও মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ভাষা সৈনিক মোস্তফা এম এ মতিন (১ আগস্ট ১৯৩৪-২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪) বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক ও বিলুপ্ত ময়মনসিংহ-১৮ আসন (বর্তমান ময়মনসিংহ-১১) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ১ আগস্ট ১৯৩৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকার সাতেঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম তাহের উদ্দিন শেখ এবং মাতা হাজেরা খাতুন। ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে মোস্তফা মতিন চতুর্থ। তিনি ১৯৫১ সালে ভালুকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বি.এ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি. ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা জেলা বারে আইন পেশায় যোগদান করেন।মোস্তফা এম এ মতিন বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করে আমৃত্যু আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এর পূর্বে মতিঝিল টি এন্ড টি হাই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছাত্রাবস্থাতে রাজনীতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন।তিনি ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ ও ১৯৭৩ সালে বিলুপ্ত ময়মনসিংহ-১৮ আসন (বর্তমান ময়মনসিংহ-১১) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ-১১ আসন থেকে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়ে ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী সরকারের স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দুই মেয়াদে (২০০১ ও ২০০২) দায়িত্ব পালন করেন।১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণের স্বীকৃতিস্বরুপ ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০০০ সালে মোস্তফা এম এ মতিনকে ভাষা সৈনিক হিসেবে সংবর্ধনা ও স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। প্রথিতযশা আইনজীবি মোস্তফা এম এ মতিন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা, ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, উন্নয়নমুলক সংগঠনের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যু বরন করেন। মৃত্যুর পুর্বমুহুর্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বলিষ্ট নেতা হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ৫ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। উনার এক কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি।