ভাষার মাসে ভাষা শহিদদের প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমপি রবির গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভাষার মাসে ভাষা শহিদদের প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমপি রবির গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি



Post Views:
৩৮

মাহফিজুল ইসলাম আককাজ : মহান ভাষার মাসে ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশা পাশি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন বারবার নির্বাচিত সাতক্ষীরার গণমানুষের প্রিয় নেতা সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য নৌ-কমান্ডো ০০০১ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। অমর একুশ ১৯৫২, আমার ভাইয়েরা, ভাষা শহিদগণ আমাদের মায়ের ভাষায় আমাদের চেতনা বা অস্থিত্ব জানান দেয়ার জন্যে অকাতরে প্রাণ দিয়ে গেছেন যেদিন। কিভাবে পেলাম আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার, ইতিহাস থেকে তুলে আনি। ”বাংলা’’ আমার ভাষা, আমার অহংকার, আমার গৌরব, মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহিদদের জানাই অবনত, অতল, বিনম্র শ্রদ্ধা। আমরা সবাই কম বেশী জানি ইতিহাস। তারপরও একুশের সেইদিনটির প্রেক্ষাপটটি আরো একবার পড়ি, জানি। ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্থানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্থান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্থানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্থান (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) ও পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর। ১৯৪৮ সালে পাকিস্থান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্থানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্থানের বাংলাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল) এ সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্থানে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবীতে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্থানের গভর্ণর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে, পাকিস্থান সরকারের সিদ্ধান্তই মেনে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনি ঘোষণা করে।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি (৮ই ফাল্গুন ১৩৫৮) এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। এই ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্থানে ক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার গণ আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্থানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন ও মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। প্রায় সত্তর বছর আগে এইদিনে হুঙ্কার দিয়েছিল বাঙালি, বলেছিল আমি মা ডাকতে চাই মায়ের ভাষায়। আর আমরা আজও মা ডাকি, কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করি সেই দিনের সেই হুংকারী বাঙালিদের।কবিতায় স্মরি, একুশ মানেই আসছে; সালাম ফিরে আসছে; বরকত ফিরে আসছে; তাজুল ফিরে আসছে; একুশ মানেই মুক্তিযুদ্ধ ফিরে আসছে; সেই সাহসী বুক পেতে দেয়া তারণ্য ফিরে আসছে; তারন্যের চোখে দুর্জয় শপথ ফিরে আসছে; শহিদেরা ফিরে ফিরে আসছে। একুশ মানেই বাংলা ভাষার দিন আসছে; কৃষ্ণচূড়া পলাশের দিন আসছে; দুনিয়া কাপানো দিন আসছে; শহিদেরা ফিরে ফিরে আসছে।আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রয়ারি।বারবার বলতে ইচ্ছে করেএকুশ মানে মাথা নত না করা’! সেই ১৯৫২ তে যখন আমাদের উপর রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেয়া হচ্ছিলো, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা হুঙ্কার দিয়ে সেটি প্রতিহত করেছিলেন কারণ, সেটি ছিল একটি চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত এবং ছিল আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমাদের চেতনা’কে রোধ করার নীল নকশার শুরু এবং আমরা সেটি দেইনি, আমরা তাই আজ মাথা উচু করে গর্ব করে বলতে পারি আমরাই পৃথিবীতে একটা জাতি যাদের আছে ”মায়ের ভাষা কে” বুকে ধারণ করার জন্যে, কথা বলবার অধিকার ছিনিয়ে আনার জন্যে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়ার মত গৌরবময় ইতিহাস।ভাষার মাসে তাই আমার একটিই প্রত্যাশা- মানুষের সেই চেতনা বোধ জাগ্রত থাকুক। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তি ও জাতিগোষ্ঠির মাতৃভাষার অধিকার হোক নিশ্চিত। সকল শিশু নিশ্চিন্তে কথা বলুক তার মায়ের ভাষায়- নিরাপদ থাক তার প্রতিটি বর্ণমালা। আমি মনে করি, মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি’কে বুকে ধারণ করা একটা জাতির জন্যে খুব জরুরি, কারণ এটি তাদের স্বকীয়তা, এর মাধ্যমেই জন্ম নেয় দেশ এর প্রতি মমত্ব বা প্রেম। আর এই দেশপ্রেমই শুধু দিতে পারে একটি দেশকে পুরো বিশ্ব মানচিত্রে আপন মহিমায় জায়গা করে মাথা উচু করে দাঁড়াবার। আজ ভীষণ দরকার জেগে উঠবার বাংলাদেশের বাংলাদেশী মানুষের বাংলা ভালবেসে, আসুন বাংলাকে ভালোবাসি। ”মাতৃ ভাষা”কে ঘিরে আপনার যে মমতা তা অটুট থাকুক, পৃথিবীর সব শিশুরা তাদের মায়ের বুকে শুয়ে নিশ্চিন্তে শুনুক তার মায়ের ভাষায় বলা প্রথম গল্প।

Please follow and like us:


Tweet
20

Explore More Districts