নয়াদিল্লি, ২১ অক্টোবর – ভারতের উত্তর প্রদেশের শিল্পনগরী কানপুরের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গত ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা করা একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সাইনবোর্ডে লেখা ছিল: ‘আই লাভ মুহাম্মদ’। অর্থাৎ আমি মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.)-কে ভালোবাসি। সাইনবোর্ডে লাল রঙের একটি হার্ট চিহ্নও আঁকা ছিল। কানপুরের সাঈদ নগরের শ্রমজীবী বাসিন্দারা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মতোই মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করছিলেন। এতে সাজসজ্জার অংশ হিসেবে তারা ওই সাইনবোর্ড টাঙান।
কিন্তু সাইনবোর্ড জ্বলে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় কিছু হিন্দু এর বিরোধিতা করে এবং পুলিশ ডেকে আনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা উত্তেজনার পর সাইনবোর্ডটি রাতে সরিয়ে ফেলা হয়। পরে পুলিশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতা ছড়ানো ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করে। এ ঘটনায় নয়জন মুসলিম ও ১৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের আইনজীবী এম এ খান জানান, মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও আনা হয়েছে, যদিও অভিযুক্তদের অনেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না।
সৈয়দ নগরের মুসলিম বাসিন্দারা বলেন, তারা প্রতি বছরই ওই স্থানে নবীজির জন্মদিনের সাজসজ্জা করেন এবং প্রশাসনের অনুমতিও ছিল। ঘটনার পর একই ধরনের অভিযোগ ওঠে উত্তর প্রদেশের বারেলি শহরে। সেখানে নয়জন মুসলিমের বিরুদ্ধে “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা”র অভিযোগে মামলা হয়।
বারেলভি মুসলিম সংগঠন ইত্তেহাদে মিল্লাত কাউন্সিলের প্রধান মাওলানা তৌকির রাজা খান এই মামলার প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দিলে প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তবুও হাজারো মানুষ সমবেত হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে তৌকির রাজা খানসহ অনেককে গ্রেপ্তার করে এবং শহরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের পরপরই অভিযুক্তদের মধ্যে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর কনভেনশন হল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। এটি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘বুলডোজার রাজনীতি’র অংশ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানিয়েছে, দেশজুড়ে অন্তত ২২টি মামলা হয়েছে এবং আড়াই হাজারের বেশি মুসলিমকে আসামি করা হয়েছে। কেবল বারেলিতেই ৮৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কবি মুনাওয়ার রানার কন্যা ও সমাজকর্মী সুমাইয়া রানা বলেন, সরকার মুসলিমদের মৌলিক অধিকার চর্চা থেকে বিরত রাখতে ভয় দেখাচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী বন্দনা মিশ্র বলেন, হিন্দুদের ধর্মীয় শ্লোগান দিতে স্বাধীনতা থাকলেও, মুসলিমরা নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয় — এটি ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী।
বিরোধী সমাজবাদী পার্টিও সরকারের দমননীতি নিয়ে সরব হয়েছে। তারা দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও প্রশাসন বাধা দিয়েছে।
আইনজীবী জিয়া জিলানি বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা বেশিরভাগই দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ। তাদের আইনি লড়াই চালানোও কঠিন।
জিলানি আরও বলেন, এই ঘৃণার রাজনীতি গরিবদের টার্গেট করছে এবং ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এনএন/ ২১ অক্টোবর ২০২৫