ভরা বর্ষায় জেগে উঠেছে কুমার নদের অবৈধ স্থাপনা : তালিকা হয়নি অবৈধ দখলদারদের
স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরে চলতি বর্ষায় পদ্মা নদীর ঘোলা পানিতে ভরে উঠেছে কুমার নদ। সেইসাথে নদীর দুই পাড়ে ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নদী দখলকারীদের সারি সারি নানা অবৈধস্থাপনা। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব স্থাপনা একেবারে নদীর অনেকটা অংশ জুড়ে চলে এসেছে। জেলা প্রশাসন গত প্রায় দেড়মাস আগে কুমার নদ রক্ষা অভিযান শুরুর পরে অদ্যাবধি সেগুলো অপসারণ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর দাবি, নদীর জায়গা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে নতুন করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান বিলম্বিত হচ্ছে। আরো প্রায় দেড়মাস লাগবে তালিকা তৈরিতে। সাধারণ জনগণ শহরবাসীর স্বার্থে দ্রুতই এসব স্থাপনা অপসারণের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমার নদের বুকে বর্ষার পানির মৃদুমন্দ ¯্রােত বইছে। নদীর বুকে নেই সেই কচুরিপানা। গোসল সহ নিত্য ব্যবহারের উপযোগী এখন এই নদী। তবে পানি বৃদ্ধির সাথে নদীর দুইপাড়ে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনাগুলো এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শহরের আলিমুজ্জামান ব্রীজের উপর থেকে দেখা যায়, জোনাকি হোটেলের পেছনের অংশের দিক থেকে শুরু করে হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারের মুরগির দোকান পর্যন্ত বিভিন্ন অবৈধস্থাপনা একেবারেই নদীর মধ্যে চলে এসেছে। ওপাড়ে ময়রাপট্টির অংশেও একই দশা। নদীর প্রায় মাঝ বরাবর অবৈধ স্থাপনার বাঁশখুটি এখনো বহাল তবিয়তে।
বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকা এসব অবৈধস্থাপনা এখন পর্যন্ত অপসারণ না হওয়ায় শহরবাসীও হতাশা প্রকাশ করেন। গত ১৭ জুন অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই ফরিদপুরে কুমার নদ রক্ষা অভিযানের শুরু হয়। ওইদিন কচুরিপানা অপসারণের কর্মসূচির মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। কুমার নদ দখল ও দূষণে লিপ্তদের চিহ্নিত করতেই এ কার্যক্রম শুরু বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, কুমার নদ বাঁচলে ফরিদপুর শহর টিকে থাকবে। কিন্তু দখল-দূষণে কুমার নদ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এজন্য কুমার নদ দখল ও দূষণে লিপ্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এই নদীকে রক্ষায় আমরা যতোদূর যাওয়া যায় ঠিক ততোদূরই যাবো। শহরের সাধারণ মানুষ কুমার নদ রক্ষায় জেলা প্রশাসকের এই আহ্বানে আশান্বিত হলেও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান বিলম্বিত হওয়ায় তারা হতাশ। ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, কুমার নদ রক্ষা করতে হলে নদের দূষণরোধ করে অবৈধস্থাপনা অপসারণ করতে হবে। নদীতে পানি বাড়ায় দূষণের মাত্রা কমেছে। তবে ড্রেন ও নর্দমার সংযোগগুলো ও দুই পাড়ের অবৈধস্থাপনাগুলো বহাল তবিয়তেই রয়েছে।
তিনি জানান, জানামতে এর আগেও অবৈধস্থাপনার তালিকা তৈরি এবং নদীর সীমানা নির্ধারণ করে ডিমার্কেশনও করে গিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা। এখন আবার নতুন তালিকা তৈরিতে এতো বিলম্ব কেনো তা বুঝতে পারছিনা। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, কুমার নদের অবৈধস্থাপনার তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিএস রেকর্ডে নদীর অনেক জমি ব্যাক্তি মালিকানায় চলে গেছে। এজন্য নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দখলদারদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করতে সময় লাগছে।
একাজে আরো প্রায় দেড় মাস লেগে যেতে পারে। এরপর এসব অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হবে। তিনি বলেন, কুমার নদের এই অংশে নতুন করে কাউকে কোন জমি বন্দোবস্ত দেয়া হচ্ছেনা গত কয়েকবছরযাবত। তাই যারা নদীর সীমানায় বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছেন তারা সকলেই অবৈধ দখলদার হিসেবেই চিহ্নিত হবেন। আইনী জটিলতা এড়াতে আমরা জেলা প্রশাসন, ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করছি। এজন্য অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।