
ফাইল ছবি
সিলেট নগরীর যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে। নগরবাসীর প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বাজার-রাস্তাঘাট—সব জায়গায়ই নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী পিপিএম-এর এই উদ্যোগকে প্রশংসা করছেন সাধারণ নাগরিকরা।
বছরের পর বছর ধরে ব্যাটারি চালিত রিকশার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সিলেট নগরীতে তা এক প্রকার অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।চালকদের অদক্ষতা, নিয়ম না মানা এবং অবৈধভাবে রাস্তার মূল ধারা দখল করে চলাচলের কারণে যানজট, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা দিনদিন বেড়েই চলছিল।
বিশেষ করে ব্যস্ত রাস্তা—বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, সুবিদবাজার ও আম্বরখানায়—প্রতিদিন যানজটের বড় একটি অংশের জন্য দায়ী ছিল এই ব্যাটারি চালিত রিকশা।
প্রথমদিকে রিকশা চালকরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন, এই ধরনের রিকশা আইনি অনুমোদন ছাড়াই চলছে এবং সড়কে বিপদ বাড়াচ্ছে। তবে একটি ক্ষুদ্র বামপন্থি রাজনৈতিক দল সম্প্রতি এই চালকদের ব্যবহার করে আন্দোলনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকরা—তাদের দাবি, “এটি প্রকৃত অর্থে রিকশা চালকদের আন্দোলন নয়; বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পদক্ষেপ।” সূত্রমতে, এই আন্দোলন সক্রিয় রাখতে সিলেটের বাইর থেকেও লোক জোগাড় করে আনা হয়েছে।
তথ্য বলছে, ব্যাটারি চালিত রিকশার প্রায় ৯৯ শতাংশ চালক সিলেটের বাইরের জেলাগুলোর বাসিন্দা।
তাদের অনেকে মৌসুমি কাজের জন্য সিলেটে এসেছেন এবং স্থানীয়দের তুলনায় যানবাহন পরিচালনায় কম দক্ষ।ফলে দুর্ঘটনা ও অব্যবস্থাপনা বেড়েছে। নগরবাসীর মতে, “সিলেটের সড়ক ও পরিবেশ রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।”
বিকল্প মানবিক প্রস্তাব:
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, হঠাৎ করে রিকশা চালকদের কর্মহীন করে দেওয়া সমাধান নয়। তাদের বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। তারা কয়েকটি বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছেন—
১️.সাবরোড ও ছোট গলিতে আগামী ৬ মাস পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত রিকশা চলতে পারবে, তবে এর জন্য এসএমপি থেকে অনুমোদন নিতে হবে এবং এনআইডির কপি জমা দিতে হবে।
২️. কোনো অবস্থাতেই মেইন রোডে এসব রিকশা চলাচল করতে পারবে না।
৩️. রিকশা তৈরী ও বিক্রি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে হবে, যাতে নতুন করে অবৈধ যান যুক্ত না হয়।
৪️. ৬ মাস পর পুরো সিলেটে এসব রিকশার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে, এবং আইন অমান্য করলে রিকশা ও চালক উভয়কেই আটক করা হবে।
এই ৬ মাস সময়ের মধ্যে চালকদের বিকল্প পেশায় অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। কেউ কেউ তাদের নিজ জেলাতেও ফিরে যেতে পারবেন।
অনেক নাগরিক মনে করছেন,“এ উদ্যোগ শহরের যানজট নিরসন ও সড়ক নিরাপত্তা রক্ষায় একটি মাইলফলক হবে।” তবে একইসঙ্গে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রশাসনের উচিত এই সময় চালকদের পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা—যেমন ট্রাফিক সহকারী, গার্মেন্টস শ্রমিক বা পরিবহন সহযোগী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
সিলেট মহানগরে ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করা নিঃসন্দেহে সাহসী সিদ্ধান্ত।
এটি যেমন নগরীর সৌন্দর্য, সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরাবে, তেমনি মানবিকভাবে চালকদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা—“আইন ও মানবতার সংমিশ্রণেই সিলেট হবে একটি নিরাপদ ও আধুনিক নগরী।”

