ঢাকা, ১৩ জুন – চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তিন মাসে জমা বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ থেকে ২০২৫ সালের একই সময়ের মধ্যে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এটি বড় অগ্রগতি।
আমানত বৃদ্ধির পেছনে অবদান রেখেছে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামের ব্যাংকে জমা ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যেখানে শহরাঞ্চলে এই হার ছিল ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তারপরও সামগ্রিক হিসেবে শহরেই এখনো সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রয়েছে। মার্চ শেষে শহরাঞ্চলের মোট আমানত ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, আর গ্রামাঞ্চলে ৩ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ আমানত শহরের আর গ্রামে মাত্র ১৬ শতাংশ।
শুধু জমার অঙ্ক বাড়েনি, বেড়েছে আমানতের সুদহারও। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সোয়া ৬ শতাংশে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের এই বাড়তি হার অনেক গ্রাহককে ব্যাংকে টাকা জমাতে উৎসাহিত করেছে।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বদলে গেছে। বিশেষ করে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠন করা হয়। নতুন ব্যবস্থাপনায় এসব ব্যাংক আমানত সংগ্রহে বিশেষ উদ্যোগ নেয়, সুদহার বাড়ানো হয়, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমানতের পরিমাণে।
ব্যাংকাররা বলছেন, এই আমানত প্রবৃদ্ধি ব্যাংক খাতের জন্য ইতিবাচক। তাদের মতে, এর পেছনে রেমিট্যান্স আয় বড় ভূমিকা রেখেছে। গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স ভালো এসেছে, যা ঘুরে ফিরে ব্যাংকে জমা পড়েছে। পাশাপাশি, ব্যাংকের ওপরগ্রাহকদের আস্থাও কিছুটা ফিরেছে। তারা জানান, পরিচালনা পর্ষদ বদলের পর কিছু ব্যাংক আমানত সংগ্রহে নতুনভাবে পরিকল্পনা নেয়, এবং অনেক গ্রাহকও নতুন করে ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তবে শুধু আমানত নয়, ঋণেও বেড়েছে গতি। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ব্যাংক খাতের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা আগের তিন মাসে ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা প্রায় ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
ঋণ বিতরণেও শহর এগিয়ে। মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর দেওয়া মোট ঋণের ৯২ শতাংশ গেছে শহরাঞ্চলে, ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। আর গ্রামে গেছে মাত্র ৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে জমা ও ঋণ উভয়ই বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন, রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং সুদহারের বাড়তি প্রণোদনা এই তিনটি বিষয় মিলেই ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: ইত্তেফাক
আইএ/ ১৩ জুন ২০২৫