বিষণ্ণতায় ভুগছেন দেশের ৭৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার্থী

বিষণ্ণতায় ভুগছেন দেশের ৭৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার্থী

বিষণ্ণতায় ভুগছেন দেশের ৭৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার্থী

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছেন।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি কিউ-১ জার্নাল প্লস ওয়ান (ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর: ৩.৭, ২০২২) এ প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ গবেষণার কার্য পরিচালনা করেন। ‘Prevalence of depression and its associated factors among undergraduate admission candidates in Bangladesh: Anation-wide cross-sectional study’ শিরোনামে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ২০২১-২২ এইচএসসি সেশনের প্রায় ৫ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীর উপর একটি জরিপ চালানো হয়।

গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ের বিষণ্ণতায় ভুগছেন। এর মধ্যে মাঝারি বিষণ্ণতায় ২৬ শতাংশ, অত্যধিক বিষণ্ণতায় ২৬ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী মারাত্মক পর্যায়ের বিষণ্ণতায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, বিষণ্ণতা বৃদ্ধি ও হ্রাস, উভয় পক্ষেই প্রভাবক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। বিষণ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে লিঙ্গ, ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার, পারিবারিক সমস্যা, গুরুতর অসুস্থতা, কোভিড আক্রান্ত, প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল, মানসিক সমস্যা। অন্যদিকে, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস, শরীরচর্চা, পড়াশুনার সময়, ধর্মচর্চা, বিষণ্ণতা হ্রাস করতে ভুমিকা পালন করে। পারিবারিক আয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বিষণ্ণতার প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হলেও এদের প্রভাব খুব জোরালো নয়। এছাড়া, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিষণ্ণতার সাথে ধুমপানের অভ্যাস, বৈবাহিক অবস্থা, প্রেমের সম্পর্ক ও ধর্মবিশ্বাস এর কোনো সম্পর্ক নেই বলেও উঠে এসেছে এই গবেষনায়।

এ গবেষণার আরেক গবেষক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্ণতায় ভোগার ঝোঁক প্রায় দ্বিগুণ। খুব সম্প্রতি কোনোপ্রকার ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হওয়া এবং পারিবারিক সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্ণতায় ভোগার ঝোঁক যথাক্রমে ২ গুণ এবং ৩ গুণ। অপরদিকে, যাদের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আছে তাদের মাঝে বিষণ্ণতার হার অধিক এবং ঝোঁক প্রায় দেড়গুণ। তবে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতন এবং নিয়মিত শরীরচর্চাকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষণ্ণতার হার তুলনামূলক কম এবং আক্রান্ত হওয়ার ঝোঁক যথাক্রমে ১.৪ এবং ২ গুণ কম।

বিষণ্ণতা হ্রাস করার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সৎ সঙ্গ এবং উত্তম পারিবারিক পরিবেশ ও বোঝাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। সেইসাথে শরীরচর্চা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের শুধু দৈহিক সুস্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। শুধু ভালো একাডেমিক ফলাফল নয়, দৈহিক ও মানসিকভাবে বলিষ্ঠ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

এ গবেষণায় আরো অবদান রেখেছেন শাবিপ্রবি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাফিউল হাসান ও আল মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনমুন সরকার, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মিলাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আখের আলী, চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবায়ের আহমেদ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ডিএস/এসএ

Explore More Districts