বিষখালী নদীর তীরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ

বিষখালী নদীর তীরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ

১৬ September ২০২৫ Tuesday ১:০৫:২২ PM

Print this E-mail this


পাথরঘাটা ((বরগুনা) প্রতিনিধি:

বিষখালী নদীর তীরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ

বরগুনার পাথরঘাটার  কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় বিষখালী নদীর তীরে গভীর গর্ত করে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটার মালিক। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণের মূল বাঁধটি ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

বরগুনা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের অনুমোদন নেই। অধিকাংশ ভাটা নদী তীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠায় মালিকরা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে কাকচিড়া ও বাইনচটকি এলাকায় আরএসবি ও আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ইট ভাটায় ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র ২০০–৩০০ ফুট দূরে নদীর তীরে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ইটভাটা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তারা দ্রুত ইটভাটা উচ্ছেদ ও নদী দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা সুজন হাওলাদার জানান, ‘আমাদের এলাকা ভাঙনকবলিত এলাকা। ভাটা মালিকরা নদীর পাড় কেটে নিলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে সময় লাগবে না।’

এছাড়া, কবরস্থানের জায়গা দখল করে ইটভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। নদীর তীরের ১৫–২০টি কবরের ওপরে ইটের স্তুপ ফেলে রাখা হয়েছে। 

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. লিটন বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছি তা ক্রয়কৃত। এটি সরকারের জমি নয়।’

বরগুনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরএসবি ইটভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক কিসলু দাবি করেন, ‘যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তা রেকর্ডীয় জমি। দলিল ও খতিয়ান দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

বরগুনার বন ও পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘নদী তীর কেটে মাটি নেওয়ায় ভাঙন বাড়ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে পরিবেশ, মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ 

বরগুনা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায় বলেন, ‘নদীর তীর কেটে মাটি নেওয়া হলে, তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

এবিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। কেউ যদি নদীর চর থেকে মাটি কাটায় জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts