বিষখালীর ভাঙনে বিলীনের পথে বিদ্যালয়, ঝুঁকিতে শতাধিক শিক্ষার্থী 

বিষখালীর ভাঙনে বিলীনের পথে বিদ্যালয়, ঝুঁকিতে শতাধিক শিক্ষার্থী 

২ December ২০২৫ Tuesday ২:০১:৪৮ PM

Print this E-mail this


বরগুনা প্রতিনিধি:

বিষখালীর ভাঙনে বিলীনের পথে বিদ্যালয়, ঝুঁকিতে শতাধিক শিক্ষার্থী 

বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদীর ভাঙনের কবলে এখন বিলীন হওয়ার পথে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামক ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ঝুঁকি নিয়েই চলছে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়া বিদ্যালয় ভবনটি যে কোনো দুর্যোগের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্র সাইক্লোন শেল্টার এবং নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হয়। নদী ভাঙন রোধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় যে কোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি নামক এলাকার ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৯ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্কুলকাম সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে বিষখালী নদীর অনবরত ভাঙনে গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে কালিকাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, বিষখালী নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়ের সামনের পাকা সড়কটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। ফলে সড়কের ভাঙা অংশ পার হয়েই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে শিশুদের। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই সাঁতার না যানায় স্কুলে আসতে গিয়ে নদীতে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও অতি জোয়ারের পানিতে স্কুলের মেঝে পর্যন্ত নদীর পানি চলে আসায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আর এ কারণেই ঝুঁকি এড়াতে বাধ্য হয়ে শিশুদের দূরের স্কুলে ভর্তি করছেন অধিকাংশ অভিভাবকরা। অপরদিকে অনবরত বিষখালী নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। 

কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হুমায়ূন কবির বলেন, স্কুলটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন নদীর ভাঙন অনেক দূরে ছিল। ১০-১২ বছর ধরে চলমান ভাঙন এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি ২০০৬ সালে স্কুলে যোগদান করি। ওই সময় শুধু প্রথম শ্রেণিতেই ৬৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। স্কুলে সবমিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিকেরও বেশি নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে এবং নদীর ভাঙন স্কুলের কাছাকাছি চলে আসায় আমাদের স্কুলটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

জিয়াউর রহমান নামে ওই বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক বলেন, স্কুল থেকে মাত্র ৬০-৭০ ফুট দূরেই এখন বিষখালী নদীর অবস্থান। প্রতিনিয়ত ভাঙনের ফলে স্কুলটি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। স্কুলের সামনের সড়কটি ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নদীর পার দিয়ে শিশুদের স্কুলে আসতে হচ্ছে। এছাড়া অতি জোয়ারের সময় স্কুলের মোঝেতে পর্যন্ত নদীর পানি চলে আসে। অনেক শিশুরাই তখন স্কুলে আসতে পারে না। এ কারণে অনেক অভিভাবকরাই তাদের বাচ্চাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করেন। ভাঙন রোধে সরকারিভাবে যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে এ স্কুলটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিদ্যালয়টি রক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি এড়াতে গত দুই বছর ধরে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে এখনো কোনো দৃশ্যমান কাজ হাতে নেয়া হয়নি জানিয়ে প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, নদী ভাঙনের ফলে স্কুলটি এখন নদীর খুব কাছে চলে এসেছে। ২০২৩ সালের দিকে স্কুলের সামনের সড়কটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে অতি জোয়ার এবং বিশেষ করে বর্ষাকালে পানি পার হয়ে শিশুদের স্কুলে আসতে হয়। অভিভাবকরাও শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পায়। আর এ কারণেই স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। এছাড়া স্কুল ভবনটি ভোটকেন্দ্র এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সাইক্লোন শেল্টার হলেও ঘূর্ণিঝড়ের সময় এখানে কেউ আশ্রয় নিতে পারে না। ২০২৩ সালের পর থেকেই স্কুলের ঝুঁকির বিষয়টি ছবিসহ লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। এ বছর আবারও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে সরেজমিনে তারা পরিদর্শন করলেও কবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তা আমরা জানি না।

এদিকে বিদ্যালয়ের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর ছালেহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়াও স্কুল থেকে তার কাছে একটি লিখিত আবেদনও দেওয়া হয়েছে।  আমাদেরকে তারা আস্বস্ত করেছেন ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া প্রাথমিক গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী এলাকার কিছু অংশ বিষখালী নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। বিশেষ করে কালিকাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিদ্যালয়টি রক্ষায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং স্থানীয় জনগণের লিখত আবেদন আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আমাদের মহাপরিচালকের নজরে এনেছি এবং ইতোমধ্যে ২০০ মিটার জায়গায় প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছি। বর্তমানে নকশার কাজ চলমান আছে, নকশা পেলেই টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। 

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts