স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ৩১ মে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে “বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় `Commit to quit’ যার বাংলা ভাবার্থ করা হয়েছে- “আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি”।
এ দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় নড়াইলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা ট্রাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রাসঙ্গিকতা ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন’ এর ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (৩১ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ হতে অনলাইনে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণের বিষয়ের ওপর একটি পাওয়াপয়েন্ট উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমি মজুমদার।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমি মজুমদার তার উপস্থাপনায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা সমূহ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। উপস্থাপনায় আরো বলা হয়, আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের সকল প্রকার বিজ্ঞাপন, প্রচার বা প্রচারণা নিষিদ্ধ। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/মোড়ক/কার্টন/কৌটার উপরের অংশে ৫০% স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান বাধ্যতামূলক। ১৮ বছর বা এর নিচে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর কাছে বা শিশুদের দ্বারা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ। ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক “সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিথ” এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। অধিকন্তু, দেশের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য-৩ অর্জনে আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও তামাকজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এ নির্দেশিকার মূল লক্ষ্য। তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী/কোম্পানি ও বিক্রেতাকে লাইসেন্সের আওতায় এনে, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে আনা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পালনে তামাক কোম্পানী ও বিক্রেতাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নির্দেশিকাটির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা অংশে বলা হয়; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র বা যেখানে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হবে তার জন্য পৃথক লাইসেন্স অবশ্যই প্রদান করতে হবে এবং প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে আবেদনের মাধ্যমে উক্ত লাইসেন্স নবায়ণ করতে হবে। লাইসেন্স গ্রহিতাদের অবশ্যই ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)’ এ বর্ণিত সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। একটি লাইসেন্স গ্রহণকারী একটি জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। একাধিক জায়গার/দোকানের জন্য পৃথক লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে এবং কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খাবারের দোকান, মুদি দোকান ও রেষ্টুুরেন্টে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের লাইসেন্স প্রদান করা হবেনা। হোল্ডিং নম্বর ব্যতীত কোন প্রকার তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রকে লাইসেন্স প্রদান করা হবেনা। সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য কোন লাইসেন্স প্রদান করা হবে না।
তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিপুল জনসংখ্যা, দারিদ্রতা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবের কারণে বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
প্রশিক্ষণে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, সিভিল সার্জন নাছিমা খানম, কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায়, জেলা তথ্য অফিসার, সহকারি কমিশনার আসিফ উদ্দিন মিয়া, সহকারি পরিচালক মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, তামাক বিরোধী জোটের সদস্য ও স্বাবলম্বীর নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু, সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম টুলু, চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান প্রমুখ।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।