বিশেষ করে বেছে বেছে উইঘুর ইমামদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে চিন, বর্বরতা চলছে ২০১৪ থেকে, জানাচ্ছে রিপোর্ট!

বিশেষ করে বেছে বেছে উইঘুর ইমামদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে চিন, বর্বরতা চলছে ২০১৪ থেকে, জানাচ্ছে রিপোর্ট!

#বেজিং: প্রশিক্ষণ শিবির যে আদতে বন্দীশিবির এবং সেখানে অমানবিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী উইঘুর নারী-পুরুষেরা, এই রিপোর্ট চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে উঠে এসেছিল। কিন্তু বস্তুত চিনের এই বর্বরতা যে শুরু হয়েছে সেই ২০১৪ সাল থেকে, সেই তথ্য এবার তুলে ধরল উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রোজেক্ট। সংগঠনের দাবি- এক্ষেত্রে চিন বিশেষ করে বেছে বেছে অত্যাচার চালাচ্ছে ইমাম এবং মৌলবিদের উপরে। ২০১৪ সালে যখন চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে পথে সশস্ত্র সেনা নামানো হয়, তা না কি এই ইমাম এবং মৌলবিদের শায়েস্তা করার জন্যই করা হয়েছিল, দাবি করছে উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রোজেক্ট।

এই জায়গায় একটা প্রশ্ন উঠবেই- বিষয়টা যদি ধর্মীয় বিদ্বেষ হয়, তাহলে পদনির্বিশেষে যে উইঘুর মুসলিমের উপরেই অত্যাচার চালানো হবে। তা যে চিন করছে না, এমনটা নয়। কিন্তু ইমাম এবং মৌলবিদের নিশানায় রাখার অর্থটা কী?

ইতিহাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে কোনও জাতিকে উত্তেজিত করতে হলে যেমন ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হয়, ঠিক তেমনই কোনও জাতিকে কোণঠাসা করতে হলে তার ধর্ম যথাসাধ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করতে হয়। এই লক্ষ্যেই চিনা রাজনীতির শিকার এখন উইঘুর ইমামরা, কেন না তাঁদের কথায় জনগোষ্ঠী ওঠা-বসা করে, তাঁরা ধর্মনিয়ন্ত্রা। গোষ্ঠীর উপরে তাঁদের প্রভাবও আছে। অন্য দিকে, মৌলবিরা ইসলামি শিক্ষার স্তম্ভ, তাঁদের আঘাত দিতে পারলে সেই শিক্ষাসঞ্চারের পথটি অবরুদ্ধ করা যায় সহজেই।

উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রোজেক্টের দেওয়া তথ্য বলছে যে এখনও পর্যন্ত ১,০৪৬ জন ইমামকে ছুতোনাতায় বন্দী করেছে চিনা প্রশাসন। এঁদের মধ্যে ৯৬ শতাংশকে ভরা হয়েছে জেলে ৫ বছরের জন্য, ২৬ শতাংশকে ২০ বছরের জন্য। ১৪ জন মৌলবিকে আবার দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, বাকিদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ শিবিরে। সেখানে চেষ্টা চলছে হান চিনা সংস্কৃতি তাঁদের বলপূর্ব গ্রহণ করানোর।

ইমাম এবং মৌলবিদের উপরে এই অত্যাচারের যথেষ্ট কারণও আছে। এর আগে শিনজিয়াম প্রদেশের নানা জায়গায় চিনা প্রশাসন ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরান পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে, মসজিদ বন্দুকের জোরে দখল করে তা রূপান্তরিত করেছে সুলভ শৌচাগারে। কিন্তু ইমাম এবং মৌলবিরা হার মানেননি। তাঁরা তাঁদের মতো করে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে বিশেষ করে মৌলবি মুম্মদ সালিহ হাজিমের কথা বলতে হয়। তিনি কুরান অনুবাদ করেছিলেন উইঘুর ভাষায়। পরিণামে চিনা প্রশাসন তাঁকে জেলে পাঠিয়ে দেয়। তেমনই অজস্র ইমামের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে প্রার্থনা পরিচালনা করানোর দোষে তাঁদের জেলে ভরা হয়েছে। এবং এক্ষেত্রে উপযুক্ত আইনি নথিও দেখাচ্ছে না প্রশাসন, একটা কাগজে হাতে কিছু একটা লিখে তাই আদালতের নির্দেশ বলে চালানো হচ্ছে!

উইঘুর মুসলিমদের উপরে চিনের এই অত্যাচার নিয়ে এর আগে সরব হয়েছে আমেরিকা ও কানাডা। আমেরিকার দাবি, গণহত্যা চালাচ্ছে চিন। অন্য দিকে, আমেরিকা ও কানাডার পর চিনের উপরে চাপ দিতে শুরু করেছে রাষ্ট্রসংঘ। চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় রাষ্ট্রসংঘ। উইঘুর মুসলিমদের বর্তমান অবস্থাও খতিয়ে দেখতে চায় তারা। রাষ্ট্রসংঘে মানবাধিকার বিষয়ক পদে হাই কমিশনার রয়েছেন মিশেল ব্যাশেলেট। একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করার মাধ্যমে শিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি। উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চিন ঠিক কী ব্যবহার করছে, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে চান তিনি। এ নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন মিশেল। কিন্তু চিনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও সম্মতি মেলেনি।

Explore More Districts