বিয়ানীবাজারে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত শিক্ষার্থী ও তরুনেরা, বাড়ছে অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ

বিয়ানীবাজারে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত শিক্ষার্থী ও তরুনেরা, বাড়ছে অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ

বিয়ানীবাজারে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত শিক্ষার্থী ও তরুনেরা, বাড়ছে অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ
সিলেটের বিয়ানীবাজারে মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। লোভে পড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও তরুণেরা এই জুয়ায় বেশি আসক্ত হচ্ছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার পৌর এলাকা থেকে শুরু করে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় এই জুয়া বিস্তার লাভ করছে। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ এই জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত এই খেলা শুরুর পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী সময় খোয়াচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।

অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্মার্টফোনে নির্ধারিত কয়েকটি অ্যাপস ডাউনলোড করে সেখানে জুয়া খেলা চলে। বিভিন্ন নামের প্রায় ১০ থেকে ১২টির মতো অ্যাপসে সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলা হয়। এসব অ্যাপসে ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়। ক্যাসিনো, সাধারণ জুয়া খেলার চেয়েও এই অনলাইন জুয়ার বাজি আরো বেশি ভয়ঙ্কর। প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেখানে সেখানে থেকে এই জুয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার লেনদেন হচ্ছে। এতে অপরাধীরা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মানুষের মধ্যে জুয়ার নেশা ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অনলাইন বাজির মরণ খেলায়। জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে কেউ কেউ নিজ থেকে আত্মগোপনে যাচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়ছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

জুয়ায় জড়িত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, এসব অ্যাপসের বেশির ভাগই পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাংলাদেশে এগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধি (এজেন্ট) রয়েছে। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ বা প্রদান করে থাকে। এজেন্টরা বিদেশি অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে হাজারে কমপক্ষে ৪০ টাকা কমিশন পায়। এজেন্টদের মাধ্যমেই বিদেশে টাকা পাচার হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চলতি বছরের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, প্রথমে ৩৬ টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ হাজার টাকা পান তিনি। এতে লোভে পড়ে এই খেলায় মারাত্মক আসক্তি চলে আসে তাঁর। গত ছয় মাসে এই জুয়ার নেশায় পড়ে মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত ৮ মাসে বিয়ানীবাজারের প্রত্যন্ত স্থান থেকে অন্তত: ৬ জন তরুণ আত্মগোপনে চলে যায়। সম্প্রতি আরেক তরুণ ব্যবসায়ী রহস্যময় নিখোঁজ হলেও ফিরে এসেছেন। পরিবার থেকে প্রথমে তারা নিখোঁজ হয়েছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়রী করেন। আত্মগোপনে যাওয়া তরুণদের সবাই ফিরে এসেছেন। জুয়ার পুরো বিষয়গুলোই চলে অনলাইনে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে বাংলায়। অনলাইন ক্যাসিনোর অ্যাপ ইনস্টলের জন্যও দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অফার।

অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না। জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই স্মার্টফোন রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম অংশগ্রহণকারীদের জুয়ায় জিতিয়ে লোভে ফেলা হয়। এরপর নেশা ধরে গেলে একের পর এক টাকা খোয়ানোর ঘটনা ঘটতে থাকে। তখন আর বের হওয়ার পথ থাকে না।

অনলাইন এই জুয়ার কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি। সাংসারিক কলহ দেখা দেওয়ার একপর্যায়ে পারিবারিকভাবে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। কেউ কৌতূহলের বশে এই অনলাইন জুয়ার বাজি ধরা শুরু করে এখন পেশাদার জুয়ার বাজিগর হয়ে গেছেন। একসময় উদীয়মান ব্যবসায়ী ছিলেন আলোচিত নিখোঁজ হওয়া বড়দেশ গ্রামের এক তরুণ । মোবাইলের দোকান ছিল তার। ছিল সুন্দর স্বপ্ন। মাত্র ক’মাসের ব্যবধানে সবই হারিয়েছেন। যে সর্বনাশা আসক্তিতে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন, এটি অনলাইন জুয়া। এখন বাড়ি ফিরে এলেও সহজে কারো সাথে মিশতে চাননা তিনি।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান বলেন, জুয়ায় নি:স্ব হওয়া ছেলেদের বেশীরভাগ উঠতি বয়সী। এদের ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা অনলাইন জুয়ায় জীবনের গতিপথ বদলে দিচ্ছে। সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া তরুণদের বেশীরভাগ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। সব হারিয়ে তারা নিজেকে বাঁচাতে আড়াল হয়ে যায়। আমরা এই সিন্ডিকেটকে ধরতে কাজ করছি।

ডিএস/আরএ

Explore More Districts