বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় শতাধিক মাদ্রাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই। এসব দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হলেও শ্রদ্ধা জানানোর রেওয়াজ নেই। এতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারছে না। দ্রত এসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতনমহল। স্থানীয়ভাবে স্কুল, কলেজ, কিন্ডারগার্টেনসহ অন্যান্য প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলেও মাদ্রাসায় এটি নির্মাণে আগ্রহী নয় কেউ।
বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান জানান, উপজেলায় ১৪টি সিনিয়র মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া কওমী, হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ সবমিলিয়ে একশ’র কাছাকাছি দ্বীনি প্রতিষ্টান স্থানীয়দের সহযোগীতায় পরিচালিত হচ্ছে। এত মাদ্রাসা থাকার পরও কোনটিতে শহীদ মিনার চোখে পড়েনি। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মাদ্রাসাগুলোতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়েও শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয় না।
স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসার মাঠ অনেক বড়। কোনো একটা পাশে যদি শহীদ মিনার নির্মাণ করে, তাহলে আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারি।’
দাসউরা সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আরিফুল রহমান বলে, ‘২১ ফেব্রয়ারি সবাই ভাষাশহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে ফুল দেয়। অথচ আমরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এটা থেকে বঞ্চিত। আমরা ফুল দিতে পারি না। মাদ্রাসার বড় মাঠ আছে। মাঠের পাশেই একটা শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা যেন শহীদদের সম্মান জানাতে পারি।’
একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরাও চাই মাদ্রাসায় যেন একটি শহীদ মিনার হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে। বিষয়টি অনেকবার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’ তার অভিযোগ, প্রবাসীরা কেবল স্কুল-কলেজে শহীদ মিনার তৈরী করে দেন। মাদ্রাসায় তাদের চোখ নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, ‘মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ কয়েকজন অকাতরে জীবন দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের এ আত্মত্যাগ কখনোই ভোলার নয়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস জানতে হবে। তাই প্রতিটি মাদ্রাসায়ই শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।’
হযরত গোলাবশাহ (র) হাফিজিয়া মাদ্রাসার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নিপু বলেন, ‘বিয়ানীবাজারের বেশীরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে, শুধু বঞ্চিত মাদ্রাসাগুলো। আমরা চাই প্রতিটি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। স্কুলের মতো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও শহীদদের স্মরণ করুক।’