Advertisement
সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বেসরকারি কন্টেইনার বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারকে ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ঘোষণা থাকলেও ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও ঘোষিত ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে নিহত শাহাদাতের পরিবার।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে নিহত শাহাদাতের পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদকের কাছে এখনও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার দাবি করেন। একই সাথে ক্ষতিপূরণের নামে কাগজপত্র নিয়ে নানান হয়রানির অভিযোগও তুলেন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে নিহত শাহাদাতের পরিবার।
নিহত শাহাদাতের চাচাতো ভাই জানান, ঘটনার পর এখন পর্যন্ত অনেকেই অনেক মাধ্যমে তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করলেও বিএম ডিপো কর্তপক্ষ থেকে আমরা কোন সহযোগিতা পায়নি। দিবে বলে বারবার বিভিন্ন সময় কাগজপত্র নিয়ে তারা আমাদের আরও হয়রানি করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীনুর হোসেন শাহীন জানান, ঘটনার ক্ষতি পূরণ বা সহযোগিতা স্বরূপ বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ সেসময় নিহতের প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দিবে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি। পরে তাদের অফিসে এখান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বারবার তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আমরা কোন ক্ষতি পূরণ বা সহযোগিতা পাইনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুরবানি ঈদের বাকি মাত্র দুই দিন। কিন্তু ঈদের আমেজের পরিবর্তে এখন
নিহত শাহাদাতের বাড়িতে চলছে বিলাপ। তার মা’র চোখের জল মনে হয় আর শেষ হবার নয়। ছেলের ছবি আগলে রাতদিন শুধু কেঁদেই চলেছেন শাহাদাতের মা জাহানারা বেগম। পরিবারের হাল ধরা ছেলেটা না থাকায় আজ নিঃস্ব তার পরিবার।
এলাকাবাসিরা জানান, সংসারের তাগিদে পড়াশোনা ছেড়ে কাভার্ডভ্যান চালানো শুরু করে সে। গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ড বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার দিন কাভার্ডভ্যানের মালামাল আন-লোড করতে বিএম ডিপোতে যায় শাহাদাত। এতে বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর দগ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরের দিন ৫ জুন দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত শাহাদাতের পরিবারের বরাতে প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন, মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার ননাই মিয়া মীর বাড়ির শাহ আলম ও জাহানারা দম্পত্তির দুই মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে শাহাদাত। এক বছর পূর্বে শাহাদাতের বাবা শাহ আলম মারা যান। এরপর দুই বোনকে বিয়ে দেওয়াসহ পরিবারের হাল ধরেন নিহত শাহাদাত।
শাহাদাতের মা জাহানারা সিটিজি নিউজকে জানান, “গত রোযার ঈদেও আমার ছেলে আমার সাথে ছিলো, আমার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আসছে একসাথে ঈদ করেছি। কুরবানির ঈদেও ছেলে বলছে কুরবানি করবে, আমার সাথে থাকবে। কিন্তু আজ ছেলে নেই।” এভাবেই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা জাহানারা।
নিহতের ছোট ভাই আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা দুই ভাই বন্ধুর মত ছিলাম। অনেক কথা শেয়ার করতাম। ভাইয়া আমার সব সময় খোঁজ নিতো। আজকে ভাইয়াকে হারিয়ে আমি একা হয়ে গেছি। আমার পড়াশোনাসহ সব খরচ ভাইয়া বহন করতো। এখন ভাইয়া নেই, কে আমার দেখাশোনা করবে! কে আমার খরচ বহন করবে?
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান সিটিজি নিউজকে বলেন, ‘কন্টেইনার ডিপোতে নিহত শাহাদাতে পরিবারকে শ্রম অধিদপ্তর থেকে ২ লাখ টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে ডিপো কর্তৃক যে টাকা দেয়ার কথা সেটা সম্পর্কে এখনও কোন কিছু আমি পাইনি। এ বিষয়ে আমি জেলা প্রসাশকের সাথে কথা বলে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবো।
এসসি/এনইউএস