বিএনপির যত নেতাকর্মীরা আছেন, তারা সবাই শিশুটির পাশে থাকবেন ফোনালাপে তারেক রহমান

বিএনপির যত নেতাকর্মীরা আছেন, তারা সবাই শিশুটির পাশে থাকবেন ফোনালাপে তারেক রহমান

মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-

নিজনান্দুয়ালী গ্রামে ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুর মায়ের সঙ্গে কথা বলে শিশুটির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় শিশুটির মাকে ন্যায়বিচার পেতে সব ধরনের সহযোগিতার কথা বলেন। সেই সাথে মাগুরা জেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মীকে শিশুটির পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

শনিবার ৮ মার্চ শিশুটির ন্যায়বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করব। শিশুটির সঙ্গে যারা অন্যায় করেছে তারা যেন আইন অনুযায়ী শাস্তি পায়।

এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, শিশুটির চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন আমরা চেষ্টা করব, আমাদের দলের অবস্থান থেকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে শিশুটির মা তারেক রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা হওয়ার বিষয়টি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এসময় শিশুটির মা তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন তারেক রহমানের কাছে। এটা শুনে তিনি আবারও বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শিশুটি যাতে ন্যায়বিচার পায়।

পরে দলের নেতারা সবসময় পাশে থাকবে বলে আবারও আশ্বস্ত করেন তারেক রহমান। সবশেষে তিনি শিশুটির দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

এর আগে, শনিবার (০৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, পাশবিক নির্যাতনের কারণে শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। তার গলার আঘাত গুরুতর। শিশুটির চিকিৎসায় গাইনি ও অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া মাঠ পাড়া শিশুটির গ্রামের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে , শিশুটির ৩ বোন, ১ ভাই, ছোট ভাইয়ের বয়স মাত্র আড়াই বছর, অপর বোনের বয়স ৯ ,বড় বোনের বয়স ১৫ বছর। শিশুটি জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। তার পিতা মানসিক ভারসাম্যহীন এবং পেশায় একজন ভ্যানচালক। ভ্যানটি তাও বছর খানেক আগে চুরি হয়ে গেছে। জমিজমা নেই। সরকারের দেওয়া বাড়িতে তাদের বসবাস।

মাগুরায় ধর্ষণ ও শারিরিক নির্যাতনের স্বীকার ৮ বছরের শিশুকন্যার শারিরিক অবস্থার খোজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহ্বাজ মনোয়ার হোসেন খান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাবেক সাংসদ নেওয়াজ হালিমা আর্লি, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.নিপুন রায় চৌধূরী, মাগুরা জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মিথুন রায় চৌধূরী, মাগুরা জেলা কৃষকদলের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুবাইয়াত হোসেন খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন।

মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান বলেন, অত্যন্ত জঘন্ন ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে আমরা ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান শিশুটির মায়ের সাথে কথা বলেছেন। আমরা চিকিৎসা সহ সকল বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি।

উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী চরপাড়ায় দুলাভাই বাড়িতে ৮ বছরের শিশুকন্যা ধর্ষণের স্বীকার হয়। ওইদিন দুপুরেই শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে ও পরের দিন দুলাভাই সজীব শেখকে আটক করে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রুজু হয়।

মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ধর্ষকের বিচারের দাবীতে গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মাগুরার বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করলে সেনাবাহিনী ও বিএনপি নেতাদের হস্থক্ষেপে পরিস্থিতিতে শান্ত হয়। এছাড়া ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

নির্যাতনের স্বীকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বর্তমানে ঢাকা সামরিক হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে।

Explore More Districts