বাপ দাদার ভিটে মাটির কোন চিহ্নই নেই, সবই গিলে খাইছে গোমতী – Ajker Comilla

বাপ দাদার ভিটে মাটির কোন চিহ্নই নেই, সবই গিলে খাইছে গোমতী – Ajker Comilla

news-image

বাপ দাদার ভিটে মাটির কোন চিহ্নই নেই, সবই গিলে খাইছে গোমতী

জাকির হোসেন হাজারী, দাউদকান্দি:

ভারতের উজান থেকে আসা পানির স্রোতে গোমতী নদীর তীরবর্তী কুমিল্লার তিতাস উপজেলার গ্রামগুলোতে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে অন্তত ৪০টি পরিবারের বসত ভিটা গোমতী নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে আছে আরও অর্ধশত পরিবার। ভাঙন ঠেকানোর জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের গোমতী নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তীরবর্তী বসতীরা বাঁশ, গাছের ডালা ফেলে কিছুটা রক্ষা হলেও এবার গত কয়েকদিনের বন্যার পানির স্রোতে গ্রামের অন্তত ৪০টি ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভয়ে অনেকেই ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ আবার আস্ত টিনের ঘরই সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যত্র।

আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামের পশ্চিম পাড়া বিল্লাল মিয়ার ভিটিপাকা ঘরটি কোন রকমে খুলে রক্ষা করলেও ভিটি এবং জমি রক্ষা করতে পারেননি। একই গ্রামের আব্দুস সালাম, আবুল হাসেম, বাদশা মিয়া, সাগর, মান্নান ও মনোয়ারার পরিবারের।

দিনমজুর আবুল হাসেম বলেন, আমার ঘর বাড়ী সব নদী নিয়ে গেছে। এখন মসজিদে কোন রকমে থাকি। ছেলে মেয়েরা অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। বাপ দাদা ভিটে মাটির কোন চিহ্নই এখন নেই, সবই গিলে খাইছে গোমতী।

একই গ্রামের মিজান মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, আমাদের তিনটি ঘর কোন রকমে খুলে অন্য জায়গায় নিয়ে রাখছি। কিন্তু ভিটেবাড়িটি রক্ষা করতে পারিনি। পাশের টিনসেট বিল্ডিংয়ে থাকতাম, এখন বিল্ডিং থেকে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি, আর বিল্ডিংয়ের আসবাবপত্র, টিনের চালসহ সকল মালামাল খুলে অন্যের বাড়ীতে রাখছি।

আবুল কাসেমের বিল্ডিংয়ের সামনের বসতঘর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি নদীর ভাঙ্গনে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন বালুর বস্তা ফেলে বিল্ডিং রক্ষার চেষ্টা করছি। পশ্চিম নারান্দিয়ার মসজিদ রক্ষার চেষ্টায় গ্রামবাসী মিলে টাকা তুলে বালুর বস্তা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করছেন।

সবই গিলে খাইছে গোমতী
                                   সবই গিলে খাইছে গোমতী

ক্ষতিগ্রস্ত নারান্দিয়া গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা জানান, দিন দিন বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে অনেক ঘর বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। এখন মানবেতর অবস্থায় আছেন। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন পরিবারগুলো।

নারান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান খোকা বলেন, নারান্দিয়া গ্রামের গোমতী নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৫০টি পরিবারের বাড়ী নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো প্রতিদিনই কোন না কোন পরিবার নিঃস্ব হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে উপজেলায় জমা দিয়েছি।
তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমাইয়া মমিন বলেন, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। আর নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেছি।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান আজকের কুমিল্লাকে বলেন, ভাঙ্গনরোধে এবং নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাধগুলো পুনঃনির্মানের জন্য প্রকল্পের পূর্বশর্ত হিসেবে সমীক্ষা প্রকল্পের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাশ হলে সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গনরোধে কাজ সম্পাদন করা হবে।

Explore More Districts