আমির হোসেন সরকার তার ছেলে বোরহান উদ্দিনের নামে বাড়িসহ ছয় শতক জায়গা কিনেছিলেন। তারপর সৌদি আরবে চলে যান বোরহান। এখন দেশে ফিরে বোরহান তার বাবা-মাকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর পবা থানায় ভরণপোষণ আইনে মামলা করেছেন আমির হোসেন। মামলায় ছেলে বোরহান এবং তার স্ত্রী আয়েশা বেগম আশাকে আসামি করা হয়েছে।
আমির হোসেন সরকারের (৭০) বাড়ি পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকায়। তার স্ত্রী আরেজা বিবি পারুলের বয়স ৬৫ বছর।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, আমির হোসেন সরকার বাড়িসহ ওই জমিটি কিনে ছেলে বোরহান নামেই দেন। কথা ছিল, বৃদ্ধ বয়সে ছেলে তাদের দেখাশোনা করবেন। ২০০০ সালে বোরহান সৌদি আরবে চলে যান। পরবর্তীতে বিয়ে করেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় বোরহান জমিটি তার বাবাকে আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) নিযুক্ত করেন।
সম্প্রতি বোরহান দেশে ফিরেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা আছেন। এখন বাবা-মাকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন করে বাড়ি করার চেষ্টা করছেন।
আমির হোসেন খানের অভিযোগ, ছেলে তাদের দেখভাল করেন না। কোনো টাকাও দেন না।
সম্প্রতি রাজশাহীর পবা থানার আমলী আদালতে গিয়ে ছেলে ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩’ অনুযায়ী মামলার আবেদন করেন আমির হোসেন। গত ১৫ অক্টোবর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান সরকার অভিযোগটি সাতদিনের মধ্যে মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে পবা থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দেন। অভিযোগের গুরুত্ব ও অপরাধের প্রকৃতি বিবেচনায় অভিযোগটি সরাসরি এজাহার হিসেবে গণ্য বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেন। আদালতের আদেশ পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মামলা রেকর্ড হয়।
আমির হোসেন সরকার বলেন, “আমার সহায়-সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। বাড়িটাও কিনেছিলাম ছেলের নামে। সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকে অনেক টাকা রোজগার করেছে। এই বয়সে নানা অসুস্থতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভাব-অনটনে জীবনযাপন করলেও ছেলে খোঁজ নেয়নি। ছেলের বউ আমাদের কোনো টাকা দিতে দেয় না। ছেলে দেশে ফিরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে নতুন করে বাড়ি করার পরিকল্পনা করে।”
তিনি বলেন, “এই বাড়িতে আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। সে (বোরহান) আমাদের বের করে এখানে বাড়ি করতে চায়। এতে রাজি না হলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে। গলা চেপে হত্যাচেষ্টা করে। প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করেন।”
আমির হোসেন সরকার বলেন, “ছেলে ও ছেলের বউ এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। তারা আলাদা বাড়িতে থাকে। আমাদের খোঁজও নেয় না। ভরণপোষণ চাওয়ায় উল্টো হুমকি-ধামকি দেয়। এমন সন্তান দেখে লজ্জা লাগে। আমার কোনো উপায় নাই, তাই আমি মামলা করেছি।”
অভিযোগের বিষয়ে বোরহান উদ্দিন বলেন, “আমি বিদেশ করেছি ২৫ বছর। আশপাশে ইনকোয়ারি করলে আসল বিষয়টা বুঝতে পারবেন। ভাই, বোন- সবার পেছনে খাটতে খাটতে আমি শেষ। দেশে আসার পরে আমি দেড় বছর ধরে বেকার। ভরণপোষণ দেব কোথা থেকে?”
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের নিজের সম্মান তো নাই, অন্যকে সম্মান দেওয়াও জানে না। আমার আরো দুইটা ভাই আছে। সব দায়-দায়িত্ব কি আমার একার, না অন্যদের আছে?”
পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। আমার জানামতে পবা থানায় এ ধরনের মামলা এবারই প্রথম হলো। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহমখদুম জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ প্রণয়ন করে। এই আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তার মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো সন্তান এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে।”
তিনি বলেন, “অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা পারিবারিক চাপে পড়ে নীরবে কষ্ট সহ্য করেন। মামলা করতে সাহস পান না। এই মামলা হয়তো অন্যদেরও সচেতন করবে।”

