২৭ জানুয়ারি ২০২৪ শনিবার ৮:১৪:০৮ অপরাহ্ন | ![]() ![]() ![]() ![]() |
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে মূল্যবান জমি মিউটেশন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করলেও কোন সুফল পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দেওয়া ও সহকারী কমিশনারের একগুয়েমির কারণেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন পরিবারগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খাজুরবাড়িয়া গ্রামের ১২২ নং জেএলের ১২১৯ খতিয়ানের ৬৬০৪, ৭৩৪৬, ও ৭৩৪৭ এবং ১২২০ খতিয়ানের ৬৬০১, ৬৬০৪, ৬৬০৮ এবং ৬৬২৪ নং দাগের মোট ৫.৭৮ একর জমির পৈত্রিক মালিক যথাক্রমে গোকুল মন্ডল, সুধন্য মন্ডল, তপন মন্ডল এবং সুদেব মন্ডল। সিএস, আরএস এবং এসএ খতিয়ানেও তাদের রেকর্ড ঠিক রয়েছে। সহজ-সড়ল প্রকৃতির ওই পরিবারগুলো পূর্বপুরুষ থেকে ওই জমি ভোগ-দখল করে আসছেন। ওই বাড়িতে ওকরাইত (অস্থায়ী) হিসেবে বসবাস করা সুবল মিস্ত্রি গং। সুবল মিস্ত্রী গংরা নিজেদেরেকে ওই বাড়ির মালিক দাবি করে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান এম.এন. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে দালালদের মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ নেয়। যা দিয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে বাউফলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজেদুর রহমানের মাধ্যমে মিউটেশন করিয়ে ২০২৭ নম্বর নতুন একটি খতিয়ান খোলেন। এরপর জমি দখল করতে গেলে ভুয়া ওয়ারিশ সনদের কথা জানাজানি হয়। এরপর প্রকৃত মালিকরা মিউটেশন বাতিল চেয়ে সহকারী কমিশনার প্রতীক কুমার কুন্ডুর কাছে আবেদন করেন। আবদেনের প্রেক্ষিতে প্রতিক কুমার কু-ু উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. হামিদুল হক বাচ্চুকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
হামিদুল হক বাচ্চু তদন্ত করে সুবল গংরা চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ভূঁয়া ওয়ারিশ সনদ নিয়েছেন এবং সেই সনদ দিয়ে প্রতারনা করে মিউটেশন করিয়েছেন উল্লেখ করে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন (স্মারক নং ৭৯/কালা/তারিখ-৮/১১/২৩ খ্রি:)। তদন্ত প্রতিবেদনে সুষ্পষ্ট মিথ্যা ও প্রতারনা করে মিউটেশন করিয়েছেন উল্লেখ থাকলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পূর্বের সহকারী কমিশনারের আদেশ বহাল রাখেন।
এ ঘটনায় আবেদনকারীদের পরিবারসহ এলাকার সাধারন মানুষ হতভম্ব হয়ে যান। একটি সূত্র জানায়, বাউফল পৌর শহরের বিএনপির এক প্রভাশালী নেতা কর্তৃক সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ডু প্রভাবিত হয়ে ওই রায় প্রদান করেন। এদিকে চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত্ব মিথ্যা ওয়ারিশ সনদ বাতিল করে প্রকৃত মালিকদের ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার জন্য এলাকার গন্যমান্য ও বয়োজেষ্ঠ্যরা চেয়ারম্যান এম.এন. জাহাঙ্গীরের কাছে লিখিত অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। ভূক্তভোগী সুদেব মন্ডল গংরা জানান, আমরা নিজ ভূমিতে পরবাস হয়ে পড়েছি। আমরা ঠিকমত খেতেও পারি না। চেয়ারম্যানের কাছে ওয়ারিশ সনদের জন্য বহুদিন ঘুরেছি।
চেয়ারম্যানের দালালরা ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য কয়েক লাখ টাকা দাবি করছেন। চেয়ারম্যান ও ভূমি অফিস যোগসাজস করে এঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে দাসপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এন. জাহাঙ্গীর জানান, আমাকে ভূল বুঝিয়ে সুবল গংরা ওয়ারিশ সনদ নিয়েছে। আমি ওই ওয়ারিশ সনদ বাতিল করে দেব। প্রকৃত জমির মালিকদেরকে ওয়ারিশ সনদ দিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্ন করা হলে দেখছি বলে জানান। ওয়ারিশ সনদের জন্য আমি কোন টাকা-পয়সা চাইনি। কেউ দাবি করলে সেটার দায়দায়িত্ব আমার না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ড জানান, আবেদনকারীগণ কোন ওয়ারিশ সনদ দেখাতে পারেনি। তাই পূর্বের আদেশ বহাল রেখেছি। আপনার অফিসেরই ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা প্রতারনা করে ভূঁয়া ওয়ারিশ সনদ নিয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। সেই প্রতিবেদনের আলোকে কী আপনি পূর্বের আদেশ বহাল রাখতে পারেন ? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ছবিঃ প্রতীকি
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |