বর্ষাকালে চুরি করে রাস্তা খনন করছে ওয়াসা-তিতাস : মেয়র তাপস

জুমবাংলা ডেস্ক : সিটি করপোরেশনের অনুমতি না পেয়ে বর্ষাকালে ওয়াসা ও তিতাস চুরি করে রাস্তা খনন করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সমন্বয়হীনতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেবা সংস্থা বিনা অনুমতিতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে এবং তাদের বাধা দিলে চুরি করে রাস্তা নষ্ট করে। একটু কঠোর হলেই অনেক সময় ওপরওয়ালাদের কাছে নালিশ ও অপবাদ দেয়। আমরা তাদের ঢাকা শহরে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছি না, উন্নয়নে বিরোধিতা করছি। জনগণের কাছে আমরা তাদের সেবা পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত করছি।

শনিবার (৬ জুলাই) বিআইপি সম্মেলন কক্ষে ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপের আয়োজন করে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা)।

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন খালগুলো বুঝে নেওয়ার চার বছর পার হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বর্ষায় স্বল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান। বর্ষাকালে রাস্তা খননের জন্য কোনো সংস্থাকে অনুমতি দেবে না জানিয়ে আগেই নোটিশ করে ডিএসসিসি।

এরপর বিনা অনুমতিতে চুরি করে ওয়াসা ও তিতাস রাস্তা খনন করে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ৩ দিন আগে ঢাকা ওয়াসা কোনো অনুমতি না নিয়ে যাত্রাবাড়ীর আরসিসি সড়ক খনন করেছে। গতবছর করপোরেশনের ৫০ কোটি টাকা খরচ করে সড়কের কাজ শেষ করেছি। এটা যে কত কষ্ট লাগে তা কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। খনন করলে আরসিসি সড়কের আর কার্যকারিতা থাকে না। সড়কের আয়ুকাল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে ওই সড়ক টিকবে না। আমরা যে টেকসই সমাধানে যাবো, কীভাবে যাব।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলে ২০২০ সালে কোমর পর্যন্ত পানি থাকত। ১৫৬ কোটি টাকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রশস্ত রাস্তা করে দিয়েছি। আজকে শুনলাম, সেখানে একটি কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য বিনা অনুমতিতে তিতাস কর্তৃপক্ষ সড়কের কয়েকটি অংশ খনন করেছে। যখন তারা উপলব্ধি করে বর্ষা মৌসুমে সড়ক খননের অনুমতি পাবে না, আমরা যখন কঠোর হই তখন তারা চুরি করে এভাবে সড়কগুলো ধ্বংস করে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলোকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করার বিকল্প নেই জানিয়ে শেখ তাপস বলেন, সরকারি-বেসরকারি ভূমি দস্যুদের আগ্রাসন দূর করতে পারলে ঢাকা শহর জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে; খাল দখলমুক্ত থাকবে। আদি বুড়িগঙ্গায় দশতলা ভবন নির্মাণকারীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি ছিল। জিরানী, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর খালের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী মাস থেকে খাল ৪টি উদ্ধারের কাজ পুরোদমে শুরু হবে।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের পর থেকে ঢাকা সিটিতে আমরা ১৬১টি জলাবদ্ধ স্থান শনাক্ত করেছি। যেসব জায়গায় বৃষ্টির পর আধা ঘণ্টার বেশি পানি জমে থাকে। তবে ১৩৬ স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি জায়গা গুলোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আরও কয়েকটি জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, রামচন্দ্রপুর খাল নিয়ে খালি গল্পই শুনছি। সেখানে রামের বাইরে রামের একটা বোন সীতাও আছে। তার একটা বাড়িও আছে সেখানে। তিনি আবার গানও করেন। সেই সীতা না কি আলাদাভাবে পানি উন্নয়নের কাছ থেকে খালের জায়গায় ভবন নির্মাণের অনুমতিও নিয়েছেন। ফলে সাদিক অ্যাগ্রো উচ্ছেদ হওয়া নিয়ে খুশি হয়ে কোনো লাভ নেই, যদি খালটা কাজে না আসে।

মেয়রকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খাল উদ্ধার করে কি করবেন? রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তো খালের পাড়ে ১৪ তলা ভবনের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এখানে সিটি করপোরেশন কি করবে? সিটি করপোরেশন কি ভাঙতে পারবে? একটা শহরে ১৪টার মতো সরকারের সেবা সংস্থা কাজ করে। সিটি করপোরেশন শুধু একাই সরকারের একটা সংস্থা নয়। ওয়াসা বলে তারা স্বাধীন, রাজউক বলে তারাও স্বাধীন। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো- রাজউক স্বাধীন সংস্থা হলেও সিটি করপোরেশনের নগরায়ণের পরিকল্পনা দেয় রাজউক। অথচ দুই সংস্থার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সাংঘর্ষিক নীতি।

আক্ষেপ করে শ্যামল দত্ত বলেন, পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করে হাতিরঝিলে ২০০ কোটি টাকার বিজিইএমইএ ভবন ভাঙিয়েছে। কিন্তু সেখানে এখন যা হচ্ছে তা বন্ধে কোনো পরিবেশবাদীদের দেখি না। উল্টো শুনছি- সেই প্রকল্পে তারা পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ করছেন। তাহলে খাল উদ্ধার করে লাভ কি?

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগরপরিল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের খালগুলোর মালিকানার প্রাতিষ্ঠানিক বদল হয়েছে, এটি তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি। দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে ঢাকা শহরের বেশকিছু খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে খাল পুনরুদ্ধার অভিযানে পরিপূর্ণভাবে সফলতা পেতে হলে প্রয়োজন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছাও। কারণ খাল দখল ও দূষণের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সবাই প্রভাবশালী। অনেকেই রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় আছে কিংবা রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। এ কারণে শুধু খালের মালিকানা বদল ঢাকা শহরের খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে না। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনমনীয় দৃঢ়তা থাকলে খালগুলোকে তার আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম প্রমুখ।

Explore More Districts