বরিশাল সদর:বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ৩ এমপি সহ ৯ জন

বরিশাল সদর:বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ৩ এমপি সহ ৯ জন

২৭ June ২০২৫ Friday ১১:৩৩:০৭ PM

Print this E-mail this


নিজস্ব প্রতিনিধি:

বরিশাল সদর:বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ৩ এমপি সহ ৯ জন

বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসন বরিশাল-৫। সদর উপজেলা ও মহানগর নিয়ে গঠিত এ আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী ১১টি সংসদ নির্বাচনে ৭ বারই জয় পেয়েছিলো বিএনপি। বাকী চারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু তা প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারচুপির মাধ্যমে আসনটিতে ১৫ বছর নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির বাইরে অন্য কোন দলের প্রার্থীর জয়ের সুযোগ-সম্ভাবনা অনেকটাই কম ছিলো। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ আসনের মধ্যে বরিশাল সদর কে বিএনপির ঘাঁটি বলা হয়। আসনটির যেমন আলাদা মর্যাদা রয়েছে তেমনি দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও আছে অনেক হিসেব-নিকেশ। বিগত নির্বাচনগুলোতে দলীয় টিকিটের ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতা কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবার তার চেয়েও বেশি বিচার-বিশ্লেষন করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবং স্বচ্ছতা এবং রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারীদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। কারণ আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণমূলক।
এ আসনে আগামী নির্বাচনে সাবেক তিন এমপি সহ অন্তত ৯জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এরা হলেন : বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সদর আসনের সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার, অপর উপদেষ্টা বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি এ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি এ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চাঁন, জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দীন সিকদার, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।
মজিবর রহমান সরোয়ার প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস জাতীয় সংসদের স্পিকার হলে উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান সরোয়ার। তবে ১৯৯৬ এর নির্বাচনে সরোয়ারকে বাদ দিয়ে আব্দুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে এহতেশামুল হক নাসিম বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার ২ বছরের ব্যবধানে ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন নাসিম বিশ্বাস। ওই বছর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিবর রহমান সরোয়ার। এরপর ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ফলে একতরফা নির্বাচনে প্রথমবারের মত আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। বিনাভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের কাছে হেরে যান।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তৎকালীন উজিরপুর-বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসনে দলীয় টিকিট পেয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম ফারুক অভি। আলালের কাছে পরাজয়ের পর মডেল কন্যা তিন্নি হত্যা মামলার আসামী হয়ে দেশ ছাড়েন অভি। বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এরপর থেকে তিনি ঢাকামুখী হলেও ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর নিজ এলাকা বরিশালে আসা-যাওয়া শুরু করেন। অনেকে বলছেন তিনি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিশ্চিত করেছেন দল চাইলে তিনি সদর আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।
২০০১ সালে সরকার গঠন করে বিএনপি তথা চারদলীয় জোট। সে সময় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) বিলকিস জাহান শিরিন। তিনিও আগামী নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে  মনোনয়ন চাইছেন। শিরিন বরিশাল জেলা বিএনপির এক সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন প্রয়াত আহসান হাবীব কামাল। এছাড়া নব্বই এর দশকে জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ এর নাম। তিনি এ আসনে নির্বাচন করার আশায় ২০১৮ সালের পর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁনও আছেন আলোচনায়। যদিও তিনি সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মেয়র পদকে। সেই লক্ষে প্রস্তুত করছেন নিজেকে।
সাবেক ছাত্রনেতা আবুল কালাম শাহীন এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। নব্বই এর দশকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহীন বর্তমানে জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব। এর আগে তিনি একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের আশায় তিনি মাঠে কাজ করছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের প্রচার প্রচারনা।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকও বরিশাল সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তিনি দীর্ঘ বছর মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে থাকা কমিটি বিলুপ্ত করে মনিরুজ্জামান ফারুক কে আহবায়ক করে গঠন করা হয় মহানগর বিএনপি। চারবছর ধরে এর নেতৃত্বে আছেন তিনি। মনিরুজ্জামান ফারুক ইতিমধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।
ভেতরে ভেতরে মনোনয়ন এর আশা করছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দীন সিকদার। তবে একটি সূত্র বলছে তিনি আগামীতে মেয়র নির্বাচনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন।
মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিনও সদর আসনে মনোনয়ন চাইছেন। তিনি ২০০৩ সালে মহানগর ছাত্রদলের সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন প্রয়াত মশিউল আলম সেন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জিএম আতায়ে রাব্বি। ২০২১ সালে গঠিত মহানগর বিএনপির সদস্য করা হয় তাকে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে পুনর্গঠন করা হয়। এতে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদ পান আফরোজা খানম। তবে একাধিক সূত্র বলেছে নাসরিন মেয়র পদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে দলের কাছে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।
গত ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর সাক্ষাত পরবর্তী সারাদেশেই নির্বাচনী হাওয়া বাইতে শুরু করেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে গিয়ে এখনই নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অপরদিকে কর্মীরা পড়ে আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যে যার মত করে পছন্দের নেতার পক্ষে সাফাই গেয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের পোষ্ট। এক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যার্শীদেরও কোথাও কোন ঘাটতি নেই। তারাও বিগত সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে। সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে কে কতটি মামলা খেয়েছেন, কতবার গ্রেফতার হয়েছেন, সার্টিফিকেট কতটা দীর্ঘ, কোন আমলে ছাত্রদল করেছেন, কোন পদে ছিলেন এমন সব তথ্য এককরে ঢেলে দিচ্ছেন ফেসবুকে। কয়েকদিন ধরে এ ধরণের প্রচারনায় ভরে গেছে ফেসবুক।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালালেই মনোনয়ন পাওয়া যাবেনা। এমপি পদে দলীয় টিকিট পেতে হলে বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। সেই যোগ্যতা কার কতটুকু আছে সে হিসেবের খাতা ইতিমধ্যে তৈরী করে ফেলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কোন আসনে কে মনোনয়ন পাবেন সেটা ইতিমধ্যে ভেতরে ভেতরে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পরই সবুজ সংকেত পাবেন মনোনয়ন প্রত্যার্শীরা।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)





বরিশাল সদর:বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ৩ এমপি সহ ৯ জন

বরিশাল সদর:বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ৩ এমপি সহ ৯ জন

যেভাবে তৈরী হয় একজন লিটন বাশার

বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু

বেলস পার্কের উচ্ছেদ সফল হয়নি এখনো বহাল শতাধিক দোকান!

দেশে আরও ১৯ জনের করোনা শনাক্ত

Explore More Districts