বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বিরুদ্ধে আইন ভেঙে ডিন নিয়োগের অভিযোগ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বিরুদ্ধে আইন ভেঙে ডিন নিয়োগের অভিযোগ

১২ November ২০২৪ Tuesday ৬:০৩:৪০ PM

Print this E-mail this


ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বিরুদ্ধে আইন ভেঙে ডিন নিয়োগের অভিযোগ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ভেঙে ডিন নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে উপচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে। আইন অনুযায়ী বিভাগের জ্যোষ্ঠ শিক্ষক সাদেকুর রহমানের ডিনের দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিষয়টি আমলে না নিয়ে প্রথমে অন্য বিভাগের কনিষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে পরে তা স্থগিত করে অন্য আরেকজন কনিষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্ব বন্টন করে প্রশাসনিক অদক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, সোমবার (৪ নভেম্বর) রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রথমে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোর্তিময় বিশ্বাসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ওই নোটিশ বাতিল করে ওই দিনই শেষ প্রহরে লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইসরাত জাহানকে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪ঠা নভেম্বর ডিনদের সঙ্গে মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী মিটিংয়ে রেজিস্টারের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও উপচার্য তাকে মিটিংয়ে রাখেননি। ডিনদের মিটিংয়ে সাবেক ডিনদের উপস্থিতির প্রয়োজন না থাকলেও উপচার্য শুচিতা শরমিন সাবেক কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন ড. মো. মহসিন উদ্দীনকে উপস্থিত রাখেন। সেখানে অধিকাংশ ডিনগণ সাদেকুর রহমানের কথা জানালেও মহসিন উদ্দীন আইনের অপব্যাখা করে অন্য বিভাগের রেফারেন্সে জ্যোর্তিময় বিশ্বাসকে ডিন পদে সমর্থন দেন। উপচার্য সেই অনুযায়ী জ্যোতির্ময়কে প্রথমে অনুমোদন দেন। অন্য বিভাগ অনুযায়ী তালিকা করলে জ্যোর্তিময় বিশ্বাস দায়িত্ব পায় না সেক্ষেত্রে ইসরাত জাহান দায়িত্ব পায় বলে সূত্রটি জানিয়েছে। তবে সঠিকতার বিষয়ে ইসরাত জাহানের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২২(৫) ধারা অনুসারে কোনো অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালনে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে দুই বৎসর মেয়াদী ডিন নিযুক্ত হবেন। আরও শর্ত থাকে যে, কোন বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে ওই বিভাগের পরবর্তী পালাসমূহে অধ্যাপকগণ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযুক্তের সুযোগ পাবেন। সেই অনুসারে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সাদেকুর রহমানকে ডিনের দায়িত্ব পাওয়ার কথা তবে আইন ভেঙ্গে পরবর্তী লোকপ্রশাসন বিভাগের ইসরাত জাহানকে ডিন নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র প্রফেসর ড. মো. মহসিন উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে ভুল বুঝিয়ে আইনের অপব্যাখা করে সাদেকুর রহমান যেন দায়িত্ব না পায় এজন্য প্রথমে জ্যের্তিময়কে নিয়োগের সুপারিশ করেন। মহসিন উদ্দীন বিভিন্ন সময়ে নিজের স্বার্থ হাসিলে ভিসিদের বিতর্কিত কর্মকান্ড পরিচালনা করিয়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া ও আন্দোলনের মুখে ফালানো তার প্রকৃত কাজ বলে দাবি করেন।

তারা আরও বলেন, ডিন হচ্ছে একাডেমিক পদ। আইন অনুযায়ী যার প্রাপ্য তাকে দেওয়া উচিৎ অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা ও শিক্ষার্থীরা সেশনজটের উপক্রম দেখা দিতে পারে ।

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে দুটি অনুষদের ডিন নিয়োগে জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে একই বিভাগের দুইজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার নজীর রয়েছে। কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন মহসিন উদ্দীনের পরবর্তীতে তানভীর কায়ছার ও বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের গণিত বিভাগের মো. শফিউল ইসলামের উচ্চশিক্ষার ছুটির সময়ে গণিত বিভাগের মো. শাখাওয়াত হোসেন ভারপ্রাপ্ত ডিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিয়োগের আইনসহ অন্য ৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই আইন রয়েছে। যেখানে ওই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একই বিভাগের পরপর দুইজন শিক্ষক দায়িত্ব পালনের একাধিক নজীর পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিন নিয়োগে প্রথমে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো তাকে ডেকে নিয়ে যোগদান করানো আবার দেড় ঘণ্টা পর সেটা বাতিল করা এটা তো ঠিক না। তিনি একজন শিক্ষক, সমাজে তার সম্মান আছে নিয়ম কানুন সঠিকভাবে না দেখে তাকে এভাবে অপমান করা প্রশাসনের উচিৎ হয়নি। গণঅভ্যুথ্যান পূর্ববর্তী হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা ব্যক্তি কিভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়। এই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনের নিজেদের ব্যর্থতা ফুটিয়ে তুলেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ডিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা মানা হয়নি। এ বিষয়ে উপচার্য ভালো বলতে পারবেন তিনি কিভাবে নিয়োগ দিলেন।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আদেশটি ভুল হওয়ায় বাতিল করেছি। উপচার্যের নির্দেশে সিনিয়রিটি হিসেবে যিনি পান, তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছি। তবে রেজিস্ট্রার স্বীকার করেন, বিগত সময়ে উপচার্যরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করেছেন, বর্তমান উপচার্য তা করেননি।

মনিরুল আরও বলেন, ‘আসলে উপচার্য স্যাররা তো সবকিছু চাইলে পারেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা মানবিক অনুষদের সাবেক ডিন মহসিন উদ্দীন বলেন, উপচার্য আমাকে ডিনদের একটি মিটিংয়ে ডাকেন। ডিন নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য বললেন যে বিভাগের পালাক্রমে হবে, আগে যা হয়েছে ভুল হয়েছে। আমাকে ডেকেছিলেন আমি আমার মতামত দিয়েছি। আমার সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছু বলেছে সেটা তো মুখ চেপে ধরতে পারবো না। পালাক্রম ঠিক কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে সেটা সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে স্পষ্ট করে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, আমি নিয়মে থাকার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আমি পড়েছি, যে নিয়মটা লেখা আছে সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও আমি আইন অনুযায়ী কাজ করে যাব।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক



শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts