১১ July ২০২৫ Friday ৩:৩৯:২৮ AM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
আমাদের বরিশাল ডেস্ক:

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এমনটি ধরে নিয়ে বরিশালে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে বিভাগের ৬ জেলার ২১টি আসনের নতুন এবং তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে লড়ছেন ১১ হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের অনেকের মনোনয়ন নিশ্চিত থাকলেও কেউ কেউ স্বস্তিতে নেই। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তারা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বাসায় যাচ্ছেন। যোগাযোগ বাড়িয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গেও।
বিএনপির স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভাগের ২১টি আসনের শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে-ঘাটে নিজ নিজ উদ্যোগে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। স্থানীয় বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিয়ে আগামীতে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন তারা।
বরিশাল জেলা
বরিশাল-১ আসনে (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) সাবেক এমপি ও হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন জহিরউদ্দিন স্বপন। বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টার সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। তবে স্বপনের মনোনয়ন এক রকম নিশ্চিত বলে জানা গেছে।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধনকুবের সরফুদ্দিন সান্টু ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপি নেতা ও সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ছেলে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক সাইফ মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। তবে এই আসনের মনোনয়ন পাওয়ার বেশি সম্ভাবনা হলো বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের। তিনি বরিশাল-২ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সঙ্গে মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন বিএনপির আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন। এ ছাড়া মুলাদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার খান ও ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদও মনোনয়ন পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহউদ্দিন ফরহাদের সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ, উত্তর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট এম হেলাল উদ্দীন, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল খালেক হাওলাদার রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন বরিশাল-৫ (সদর)। এই আসনের ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ ও সিটি মেয়র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত রয়েছে। তবে এর বাইরে অর্ধডজন নেতা নানাভাবে নিজেদের জানান দিচ্ছেন। এদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পথ স্থগিত) অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত রয়েছে সাবেক এমপি জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানের। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান মাসুদ এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা সোলাইমান সেরনিয়াবাত নানা তৎপরতার মাধ্যমে নিজেদের আলোচনায় রেখেছেন।
পিরোজপুর জেলা
পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-জিয়ানগর) আসনে মনোনয়নযুদ্ধে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান।
পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদ হোসাইন, ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর এবং ব্যবসায়ী ফখরুল আলম।
পটুয়াখালী জেলা
পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকি) আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর মনোনয়ন একেবারে নিশ্চিত। তবে এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল আলম তালুকদার। তার সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি সহদপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন। কেন্দ্রীয় বিএনপিতে মুনিরের লবিং রয়েছে।
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন চাইছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। তবে এই আসনে হাসান মামুনের তৎপরতা বেশি। জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও অন্যদের তুলনায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী) আসনে মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন এবং কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির হোসেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এ বি এম মোশাররফ। এবারও তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।
ভোলা জেলা
ভোলা-১ (সদর) আসনের বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য হায়দার আলী লেলিনের সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর। ভোলা-২ আসন (দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন) মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বড় ভাই সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিমের। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক দল শাখা সভাপতি জাহাঙ্গির এম আলম।
ভোলা-৩ (লালমোহন তজুমউদ্দিন) আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের মনোনয়ন বদল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সুযোগ থাকার পরেও প্রলোভন অগ্রাহ্য করে তিনি কিংস পার্টিতে যোগদান করেননি। ভোলা-৪ আসনে (চরফ্যাশন ও মনপুরা) সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলমের সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে আছেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
ঝালকাঠী জেলা
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নযুদ্ধে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আযম সৈকত। ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর-নলছিটি) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু। ব্যাপক গণসংযোগের মাধ্যমে তিনি প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার এবং মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটি সহসভাপতি জেবা আমিনা আল গাজী এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বরগুনা জেলা
বরগুনা-১ (আমতলী, তালতলী, বরগুনা সদর) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম মোল্লা, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ্জামান মামুন মোল্লা এবং বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রেজবুল কবির মনোনয়ন চাইবেন।
তবে বরগুনা-২ (বামনা, বেতাগী, পাথরঘাটা) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনির মনোনয়ন নিশ্চিত রয়েছে।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |